শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অন্য রকম ঈদ-আনন্দ

সাজ্জাক হোসেন শিহাব

রাফির দাদুর বাড়ি কুড়িগ্রামে। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে যেতে রাফির ঢের আপত্তি। কারণ একটাই, এত দূরের পথ তার মোটেও ভালো লাগে না। তাই দাদুর বাড়িতে তার খুব কম যাওয়া হয়। বাড়ির ছোটো ছেলে বলে রাফিকে সবাই ভালোবাসে। তার কথা রাখে। সবাই রাফির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলে—ঢাকা ছেড়ে কুড়িগ্রামে যাওয়া আসলেই কষ্টের। রাফি ঠিকই বলে। তাই সবাই ঢাকায় থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু এবার ঈদে সেই রাফিই কিনা দাদুর বাড়ি যেতে এক পায়ে খাড়া! সে দাদুর বাড়ি যাওয়ার জন্য ভীষণ ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। রাফির এমন কাণ্ড দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। রাফির বাবা রাফির জেদ দেখে বলে—বাবা রাফি, এবার তো বন্যায় সব ডুবে গেছে। ওখানে যেতে খুব কষ্ট হবে। আমরা বরং এবার ঢাকায় ঈদ করব। কুড়িগ্রামে যাব না, কেমন। বাবার এমন কথা শুনে রাফির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। সে জেদ ধরে। এবারের ঈদ কুড়িগ্রামেই করতে হবে। রাফির এমন কথায় তার বাবা-মা বলে, ছেলের এ কেমন কথা! বানে ডোবা এলাকায় কী ঈদের আনন্দ হয়! রাফির বড়ো ভাই রাফিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। রাফি তাদের উল্টো বোঝায়। তারা রাফির সঙ্গে পেরে ওঠে না। অবশেষে সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, ঈদটা গ্রামের বাড়িতেই হবে।

কারণ একটাই—রাফি চেয়েছে। রাফি এ কথা শুনে খুব খুশি হয়। সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি ঈদ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। রাফির বাবা গ্রামে একটা গরু কেনার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর একদিন তারা গ্রামের যাওয়ার জন্য বের হয়। রাফি এমন সময় সবাইকে একটু দেরি করতে বলে। সে দৌড়ে বাড়ির বাইরে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে কিছু বন্ধু। আর ইয়া বড়ো বড়ো কয়েকটা ব্যাগ। সবাই ব্যাগগুলো দেখে চোখ বড়ো করে চেয়ে থাকে। রাফির বাবা রাফিকে বলে—এই বড়ো বড়ো ব্যাগের মধ্যে কী আছে, রাফি? বাবার উত্তরে রাফি বলে—এগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার আর ওষুধ আছে বাবা। আমরা সবাই মিলে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এসব কিনেছি। আমরা জানি, ২০১৭-এর এই বন্যা কতটা ভয়াবহ। যারা আমাদের এলাকায় বন্যার পানিতে ভীষণ কষ্টে আছে, তাদের জন্য আমার বন্ধুদের নিয়ে আমি কিছু করতে চেয়েছি।

এই খাবারগুলো বিতরণের জন্য আমি ওখানে যেতে চাই। আমার বন্ধুরা আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। রাফির বন্ধুরা রাফির সঙ্গে একমত পোষণ করে। এ ছাড়া এবার কোরবানির গোশতও আমি নিজ হাতে গরিবদের দিতে চাই, বাবা। রাফির এমন কাজ দেখে আর কথাশুনে তার ভাইয়ের আর বাবা-মায়ের অনেক গর্ব হয়। তাদের চোখে আনন্দের জল আসে। চোখের জল মুছতে মুছতে রাফির মা-বাবা বলে—অবশ্যই, অবশ্যই বাবা। আমরাও তোমার পাশে আছি। এই বলে তারা ব্যাগগুলো গাড়িতে তোলে। এরপর রওনা দেয় গ্রামের পথে। এই ঈদটা রাফির কাছে অন্য রকম আনন্দের বলে মনে হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর