শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দৈত্য ও আমাদের বন্ধু রাজা

ফখরুল হাসান

দৈত্য ও আমাদের বন্ধু রাজা

স্কুল ছুটি, তাই মা বাবা আর আমি, নানু বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। নানু আমাকে পেয়ে ভীষণ খুশি। রাতের খাবার শেষ করে। নানুর রুমে গিয়ে, নানুর কাছে গল্প শুনতে চাইলাম। নানু সবসময় আমাকে রাজকুমার, রাজকুমারী, রাক্ষসী আর পরীদের গল্প শোনাতেন। কিন্তু, আজ আমি নানুর কাছে অন্য কোন গল্প শুনতে চাইলাম। নানু বলল, ঠিক আছে। আজকে তাহলে দৈত্য ও আমাদের বন্ধু রাজার গল্প শোনাচ্ছি। আমি মনোযোগ দিয়ে নানুর গল্প শুনতে শুরু করলাম। নানু বলতে শুরু করল। স্বপ্নপুর নামের এক রাজ্যে ছিল, সে রাজ্যটি দৈত্যরাজের দখলে ছিলো। দৈত্যরাজ, স্বপ্নপুরের প্রজাদের নিজের গোলাম বানিয়ে রেখেছিল। দৈত্যরাজের বদল হয়। কিন্তু স্বপ্নপুরের প্রজাদের ভাগ্য বদল হয় না! সব দৈত্যরাজ স্বপ্নপুরের জন্য, একেই নীতি বজায় রাখে।  প্রজাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল কৌশলে। নতুন দৈত্য রাজ্যভার গ্রহণ করল। প্রজারা মনে করল। হয়তো, এবার তাদের আশা কিছুটা হলেও পূর্ণ হবে। কিন্তু না, কিছুদিন যেতেই, স্বপ্নপুরের প্রজাদের উপর নেমে এলো নতুন যন্ত্রণা। নতুন দৈত্যরাজ ঘোষণা দিলেন, স্বপ্নপুরের বাসিন্দাদের দৈত্যদের ভাষায় কথা বলতে হবে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যারা তাদের কয়েকজনকে রাক্ষসরা মেরে ফেলে। দৈত্যরাজের ঘোষণা অমান্য করেছে বলে বাকিদের বন্দী করে রাক্ষসপুরীতে নিক্ষেপ করে। দৈত্যরাজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বপ্নপুরের প্রজাকুল অপেক্ষা করতে লাগলো। কোন রাজকুমার এসে তাদের স্বপ্নপুরকে, দৈত্যরাজের হাত থেকে মুক্ত করবে। এভাবে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ চলতে লাগলো। স্বপ্নপুুরের প্রজাদের দৈন্যদশা বাড়তে লাগল। আর প্রজারা নিজের মুক্তির পথ খুঁজতে লাগল। একদিন সত্যি সত্যি এক রাখাল রাজার জন্ম হলো স্বপ্নপুরে, যে রাখাল রাজা অল্প বয়সেই ভাবছে, স্বপ্নপুরের অসহায় প্রজাদের কথা। সময়ের সাথে সাথে রাখাল রাজা বড় হয়। একদিন স্বপ্নপুরের প্রজাদের মুক্তির মন্ত্র শুনালেন। তাদের বুঝাতে চেয়েছেন, সব প্রজারা মিলে এক হলে, দৈত্যরাজের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব এবং বিশাল দেহের দৈত্যকে বন্দী করা সম্ভব। স্বপ্নপুর থেকে দৈত্যদের তাড়িয়ে দিতে রাত দিন পথ খুঁজে রাখাল রাজা। দিনে দিনে স্বপ্নপুরের মানুষের কাছে রাখাল রাজার হয়ে গেল রাজকুমার। সেই রাজকুমার পুরোটা জীবন স্বপ্নপুরের প্রজাদের জন্য ব্যয় করেছেন। স্বপ্নপুরের মানুষের কাছে রাজকুমার হয়ে উঠল। " বন্ধুরাজা সেই বন্ধুরাজা স্বপ্নপুরের মানুষকে সাথে নিয়ে, দৈত্যদের হাত থেকে স্বপ্নপুরকে মুক্ত করতে শুরু করে যুদ্ধ। আশপাশের সকল রাজ্যসভার রাজা, রাজকুমারীরা বন্ধুরাজাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সাথে রাজাবন্ধু যুদ্ধ কৌশল। স্বপ্নপুরের প্রজাদের সাহসিকতা, স্বপ্নপুরকে ভালোবেসে নিজের জীবন দান। অল্প কয়েকদিনেই। দৈত্যরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে। স্বপ্নপুর, বন্ধুরাজাকে বুঝিয়ে দিয়ে, রাক্ষসপুরীতে চলে গেল দৈত্যকুল । এরপর সবাই সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল। সবাই মিলে চেষ্টা করতে লাগল, কীভাবে স্বপ্নপুরকে আরও উন্নত রাজ্য করা যায়। রাজা যখন, তার প্রজাদের নিয়ে, স্বপ্নপুর সাজাতে ব্যস্ত। ঠিক সেই সময়, একদল দৈত্য তাকে মেরে ফেলল। এইটুকু বলেই নানু হঠাৎ নীরব! মনে হচ্ছে ঘরটিতে কিছুক্ষণ আগে কেউ মরেছে! চুপচাপ হয়ে গেল নানু। হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। নানুর চোখে জল! আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার মনে ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন, গল্প বলতে গিয়ে, নানুর চোখে জল কেন? যতই নানুকে জিজ্ঞেস করি ততই নানু কাঁদছে! নানুকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে চেষ্টা করলাম...

সর্বশেষ খবর