শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিক্রম ও ভিনগ্রহের প্রাণী

শেখ বিপ্লব হোসেন

বিক্রম ও ভিনগ্রহের প্রাণী

বিক্রম! পড়তে যাও। এখন তো টিভি দেখার সময় না। কাল না তোমার পরীক্ষা! সে বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে তোমার? আজব একটা ছেলে জুটেছে কপালে। কবে যে ছেলেটার সুবুদ্ধি হবে আল্লাহই জানেন!"

বলতে বলতে মারিয়া বেগম টিভির রিমোট কেড়ে নিলেন, পড়ার টেবিলে ঠেলে পাঠালেন বিক্রমকে। মায়ের আদেশ। পড়তেই হবে। বিরক্তির বোঝা মাথায় নিয়ে বসে পড়ল সে, চোখ বোলাতে শুরু করল পাঠ্যবইয়ে। টিভি দেখার প্রচুর নেশা বিক্রমের। কার্টুন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বেশ পছন্দ তার। সে ভীষণ কৌতূহলী। একটু সময় পেলেই ঘরে ফেলে রাখা বিভিন্ন নষ্ট জিনিসপত্র দিয়ে এটা সেট তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নতুন কিছু সৃষ্টি করতে আপ্রাণ চেষ্টা তার।

কাজেই, মা তাকে যতই বকাঝকা করুক না কেন, এতে কিছুই আসে যায় না। সমাজের নানা অসঙ্গতি বিক্রমের মনে দাগ কাটে। বড়দের অসম্মান, শিক্ষকদের কথা অমান্য করা, অযথা রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো, মন্দ কাজে ব্যস্ত সময় কাটানো এসব বিক্রমকে ভাবিয়ে তোলে। সেই ভাবনার জগতে হারিয়ে যায় সে। কীভাবে সমাজের অসঙ্গতিগুলোকে দূর করা যায়, অসুন্দর মানুষগুলোকে কীভাবে ভালো কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, এই ভাবনাগুলো সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায় ওকে। যদি এমন কিছু আবিষ্কার করতে পারতাম, যা দিয়ে এ সমাজের অসুন্দর মানুষগুলোকে সহজেই আলোর পথে আনা যেত!

বদলে দেওয়া যেত ঘুণে ধরা সমাজটাকে। ভাবনার শেষ নেই বিক্রমের। একদিন বৃষ্টির রাত। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই। ঘুটঘুটে অন্ধকার কেবল চারদিকে। মাটিপোকার চিঁ চিঁ শব্দটিও নেই; আছে কেবল বৃষ্টির ঝুমঝুমি, মেঘকন্যার গুড়গুড়ি চলাচল। তারই ফাঁকে বিজলীর ছটা-যেন রাঙা আলোর পরী নেমে আসে মাঝে মাঝে।

তখন বিক্রমের স্কুলে পরীক্ষা চলছে। তখনো সারারাত জেগে পড়ছে সে। পড়তে পড়তে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অনিচ্ছাবশত। হঠাৎ আকাশ ভেঙে যেন অন্ধকার জগৎ আলোয় আলোকিত হলো। এমন আলো দেখে চমকে ওঠে বিক্রম। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখ, এক অদ্ভুত প্রাণী দাঁড়িয়ে তার সামনে। কেমন যেন বিদঘুটে চেহারা, চোখ দুটো ভয়ঙ্কর ধরনের। আগে কখনো এরকম ভয়ঙ্কর প্রাণী দেখেনি সে। বিক্রম কিছুটা ভীত থাকলে সাহস নিয়ে দেখে রীতিমতো অবাক!

প্রাণীটি মিষ্টি-স্বরে বলল, বিক্রম! তুমি এখন কী করছ? বিক্রম ভয়ে কাঁপছে। সে আবার বলল, ভয় পেও না! তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো না? বিক্রম ভয় সামলিয়ে বলল, না! আমি তো তোমাকে চিনতে পারছি না। তাছাড়া তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি। প্রাণীটি বলল, আমি তোমার বন্ধু। সমাজের অসুন্দর মানুষদের সুপথে ফিরিয়ে আনার যে স্বপ্ন তুমি দেখ, এটা তো ভালো কাজ। এটা ভালো মানুষের কাজ। তোমার সুন্দর ভাবনাগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাই আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। চলে এলাম তোমার কাছে। বন্ধু! বলো,আমি তোমার স্বপ্ন পূরণে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

বিক্রম বলল, আমি এমন কিছু তৈরি করতে চাই, যার স্পর্শে প্রথিবীর সমস্ত অসুন্দর মুহূর্তেই সুন্দরে পরিণত হবে? এক নিমেষেই দুঃখী মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচে যাবে। এ পৃথিবী আবার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে, মুক্তমনে পাখিরা গাইবে গান, আমাদের মতো শিশু-কিশোর-কিশোরীরা হেসে খেলে বড় হবে।

তবে তাই হবে বন্ধু। তুমি আমাদের রাজ্যে চলো! তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। এ কথা শুনে, বিক্রম মহা খুশি। সে বলল, তাহলে আর দেরি কেন বন্ধু? আমাকে নিয়ে চলো তোমার গ্রহে। ভিনগ্রহের প্রাণী বিক্রমকে বলল, তবে তাই চলো বন্ধু! মায়ের ডাকাডাকিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। বৃষ্টির রিমঝিম রিমছিম ছন্দ থেমে গেছে। কখন যে নিশি কেটে হয়ে গেছে ভোর, তা বিক্রম বুঝতেই পারেনি।

সর্বশেষ খবর