শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমার ভূত মামা

আমির আসহাব

আমার ভূত মামা

পড়াশোনায় খারাপ না নিতু। তবে মন খারাপের একটি কারণ মিতু। মিতু নিতুদের ক্লাসের এক। এমন অনেক হয়েছে, স্যার মিতুকে ডেকেছে নিতু হাজির। এসব নিয়ে বান্ধবীরা প্রায়ই হাসাহাসি করে। বলে তুমি কোনো দিনই এক রোল হতে পারবে না। অথচ ভাবটা এমন যে, তুমিই মিতু। এসব কারণে নিতুর প্রায়ই মন খারাপ থাকে। আজও নিতুর মন খারাপের দিন। মামা নিতুকে মজার মজার গল্প শোনায়। নানান জিনিস উপহার দেয়। একমাত্র মামাই নিতুর মনের দুঃখ বোঝে। এ কারণেই মামার সাথে নিতুর এত ভাব। যে কয়টা দিন মামা বাড়ি থাকে, নিতু মামার পিছু ছাড়ে না। রাতের খাবারের সময়ও নিতু মামার কোলঘেঁষে বসেছে। মুখটা মলিন করে তাকিয়ে আছে মামার দিকে। মামা বিষয়টা খেয়াল করে বলতে লাগল—

—নিতু, তোমার মন খারাপ?

—না মামা, এমনি।

—বল না শুনি।

নিতুর মুখটা এবার হাসিতে জ্বলজ্বল করে উঠল। নিতু বলতে লাগল—

—জানো মামা, গতকাল আমি আমাদের পেছন ভিটের বড় আমগাছটি স্বপ্নে দেখি। হঠাৎ দেখি গাছের গায়ে হলুদ খামের চিঠি।

—চিঠি! এই বয়সে? কই দেখি।

—আরে মামা, আমি বললাম না স্বপ্নে দেখেছি।

—ঠিক আছে, কী লেখাছিল ওতে?

—কী লেখাছিল মনে নেই। তবে লেখাগুলোর রং বারবার পরিবর্তন হচ্ছিল। পড়তে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। আর অমনি দেখি আম্মু আমাকে ডাকছে। সকাল হয়েছে। ঘুম ভেঙে যায়।

—তোর আম্মুটা না, এত সুন্দর স্বপ্ন কেউ ভাঙে।

—আমার কাছে কিন্তু জাদুর মতো লাগছিল। যদি কোনো জাদু দিয়ে আমার রোল এক বানানো যেত।

—এক কেন? জাদু হলে তো শূন্যও সম্ভব।

—ধুর, শূন্য হলে কি দাম আছে?

—আছে, আছে। খাবারটা খেয়ে নাও, পরে দেখব ঐখানে আসলেই কিছু আছে কিনা।

খাবার শেষে নিতুর আর তর সয় না। মামা মনে হয় ভুলেই গেছে। বারবার মামাকে তাড়া দিচ্ছে। হঠাৎ বাধ সাধল আম্মু। কী হয়েছে? এই রাতে আবার কোথায় যাওয়ার বায়না ধরেছে। বলতে বলতে, ঘুমানোর ঘরে মশারি টানাতে চলে গেল সে। নিতু ফিসফিস করে বলল, আম্মুটাও সব কথা শুনতে চায়। মামাও নিতুর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, তুমিও বড্ড পাকা পেকেছ। দেখ ঘুমানোর বন্দোবস্ত হলো কিনা। আগে চিন্তা মুক্ত হই। ঠিক আছে বলে চলে গেল নিতু। এই ফাঁকে মামা সেরে নিল সব কাজ।

 

হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছে মামা। পাশেই নিতু। কী অবাক কাণ্ড। সত্যি সত্যি হলুদ খামে মোড়ানো একটা চিঠি। নিতু বিশ্বাস করতে পারছে না। সে কি সত্যি দেখছে নাকি স্বপ্ন। নিতু মামার দিকে একবার তাকাল। মামা চিঠিটা তুলতে ইঙ্গিত দিচ্ছে, নিতু বুঝতে পারল। কিন্তু নিতুর সাহস হচ্ছে না। আবার মামার দিকে তাকাতেই, মামা তুলল চিঠিটা। তুলে নিতুর হাতে দিল। তোমার চিঠি তুমি পড়। নিতু সাহস করে চিঠিটা খুলেই অবাক। খুব সুন্দর একটা কলম। সাথে একটা চিরকুটও আছে। চিরকুট মানে ছেঁড়া কাগজে লেখা অল্প কিছু কথা। সেখানে লেখা আছে—প্রিয় নিতু, আমি ভালো ভূত। অদ্ভুত এই জাদুর কলমটি তোমাকে দিলাম। কলমটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যা পড়বে তা লিখবে। কাজটি করলে চল্লিশ দিন পর ফল পাবে। সাথে পাবে একটি আকর্ষণীয় পুরস্কার। ইতি, ভালো ভূত।

নিতু হিসাব করে দেখল ঠিক চল্লিশ দিনের দিনই তার পরীক্ষা শেষ। তখন মনের সুখে ঘুরে বেড়ানো যাবে। এ কয়টা দিন কষ্ট করলে সমস্যা নেই। যদি জাদুর ভূত সত্যি পুরস্কার দেয়, তবে তাও হয়তো জাদুর হবে। চিন্তা-ভাবনা শেষ করে মামার দিকে তাকাল নিতু। মামা দেখল নিতুকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। মামা বলল, কলমটা দিয়ে কী করবে? কলমটা আমাকে দিয়ে দাও। নিতু হঠাৎ বেঁকে বসল, তোমরা কেউ আমার ভালো চাও না। দেখলে না জাদুর ভূত কী লিখেছে। আমি পুরস্কারটি জিততে চাই। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল মামা। কী যেন কী চিন্তা করে বলে উঠল

—কাল সকালে ঢাকা ফিরছি। তোমার জাদুর কলমে কী কাজ করে জানাবে কিন্তু। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল নিতু।

 

নিতু এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। গত মঙ্গলবার তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। নিতুর রোল এক হয়েছে। নিতু অনেক খুশি। নিতুর মাও অনেক খুশি। নিতুর এ সাফল্যে বাড়িতে ভোজের আয়োজন হতে যাচ্ছে। এজন্য নিতু মামাকেও ডেকে পাঠিয়েছে। মামা এবারও নিতুর জন্য আকর্ষণীয় একটা উপহার কিনেছে। তার ঠিকই মনে আছে চল্লিশ দিন পর ফল পাবে বলে নিতুকে আশা দিয়েছিল। ফল সে ঠিকই পেয়েছে। কলমটা আসলে জাদুর ছিল না। নিতুর পরিশ্রমই সফলতা এনে দিয়েছে। কথাগুলো কীভাবে নিতুকে বোঝাবে ভাবতে থাকে মামা। এদিকে গাড়ি দ্রুতবেগে এগিয়ে চলে নিতুদের গ্রামের দিকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর