কয়েক যুগ আগের কথা, সে সময় বাংলাদেশের সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। এ অঞ্চল সে সময় ছিল নদীনালায় পরিপূর্ণ। এসব নদীনালায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। সেই যুগে এ অঞ্চলে যোনায়েদ, সাকিব ও রহিম নামে তিন বন্ধু বসবাস করত। এই তিন বন্ধুর মধ্যে যোনায়েদ একটু বেশি চঞ্চল ও সাহসী স্বভাবের ছিল। সে একদিন রহিম ও সাকিবকে একটি গভীর খালে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল। এই খালে কেউ মাছ ধরতে যেত না। খালের দুইপাশ বাগানে পরিপূর্ণ এবং জনবসতি থেকে দূরে হওয়ার কারণে সাকিব এবং রহিম সেখানে মাছ ধরতে যেতে রাজি হলো না। তখন যোনায়েদ তাদের বললো, ‘সামনের পূর্ণিমা রাতে তোদের নিয়ে ওই খালে মাছ ধরতে যাবো, তোরা প্রস্তুত থাকিস’। সাকিব আর রহিম তখন চুপ করে থাকে।
পরবর্তী পূর্ণিমা রাতে যোনায়েদ নৌকা নিয়ে খালের এক কিনারায় অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সাকিব এবং রহিম এসে নৌকায় উঠলে তাদের যাত্রা শুরু হলো। আস্তে আস্তে তারা খালের গভীরে চলে গেলো। সেখানে কোনো জনবসতি নেই, মানুষ বলতে আছে শুধু তারা তিনজন। কিছুক্ষণ পর মাছ ধরা শুরু হলো। যোনায়েদ খেয়াল করলো সাকিব এবং রহিম মাছ ধরছে না, তারা চুপচাপ বসে আছে। যোনায়েদ এটাকে গুরুত্ব দিলো না। ও ভাবলো জনশূন্য স্থানে এসে ওরা দুজন হয়তো ভয় পাচ্ছে। ও মাছ ধরা চালিয়ে গেলো। অনেকক্ষণ মাছ ধরার পর যোনায়েদ ওদের বললো, ‘মাছ তো অনেক ধরা হলো, এবার তবে বাড়ির দিকে যাই?’ ওরা দুজন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তখন মাছ রাখবার পাত্রের দিকে তাকিয়ে যোনায়েদ দেখলো খুব অল্প কিছু মাছ রয়েছে। ওরা বুঝতেই পারলো না মাছ এত কমে গেলো কীভাবে। ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যোনায়েদ একটু সাহসী হওয়া সত্ত্বেও ওর মনে ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করলো। সে দ্রুত নৌকা চালিয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলো। হঠাৎ তাদের নৌকা কিছু একটায় বেঁধে গেলো। যোনায়েদ সেটা থেকে নৌকা ছাড়ানোর জন্য এগিয়ে গিয়ে দেখলো পানিতে মানুষের মতো অবয়বের কিছু একটা ভাসছে। ও সেটিতে হাত রাখতেই সেটি নড়ে উঠলো। এ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো।
পরদিন দুপুরে ওর জ্ঞান ফিরলো। তখন সে খেয়াল করলো, সে বিছানায় পড়ে আছে এবং সাকিব ও রহিমসহ আরও কিছু লোক তার পাশে বসে আছে। সেখানে থাকা লোকজনের কাছে যোনায়েদ বললো, ‘আমি তো মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। আমি এখানে এলাম কীভাবে আর আপনারা আমাকে ঘিরে বসে আছে কেন?’ তখন লোকজন উত্তর দিলো, ‘তুমি গতকাল রাতে একা একা নৌকা নিয়ে গভীর খালে চলে গিয়েছিলে এবং সেখানে অজ্ঞান হয়ে নৌকার মধ্যে পড়ে ছিলে। আজ সকালে গ্রামের হাশেম মিয়া খাল দিয়ে নৌকা চালিয়ে যাওয়ার সময় দেখে যে, তুমি নৌকার মধ্যে পড়ে আছো। সে তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।’ যোনায়েদ তখন অবাক হয়ে বললো, ‘রাতে তো আমি একা যাইনি, আমার সঙ্গে তো সাকিব আর রহিম ছিলো।’ সবাই বললো যে, তার সঙ্গে কেউই যায়নি। সে একাই গিয়েছিলো এবং সারা রাত সাকিব আর রহিম গ্রামের লোকজনের সঙ্গে মিলে তাকে খুঁজেছে।
তারপর থেকে যোনায়েদ শুধু একটা প্রশ্ন ভেবে চলেছে, সেই রাতে যদি তার সঙ্গে সাকিব এবং রহিম না গিয়ে থাকে তবে ওই দুজন কারা ছিলো? ওই দুজন কি অশরীরী কিছু ছিলো? সেই রাতে ও কি আসলেই মাছ ধরতে গিয়ে এসব ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলো?