মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মানবতাবাদী ইতিহাসবিদ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইতিহাসের সত্যানুসন্ধানী জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ। মূল্যবোধের ধস যখন সমাজ, দেশ ও জাতির ওপর থাবা বিস্তার করছে তখন মানবতাবাদী এই ইতিহাসবিদের জীবনাবসান শুধু শোকের নয়, দুঃখ ও হতাশার। অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের জন্ম ফরিদপুরে ১৯২২ সালে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি দেখার সুযোগ পেয়েছেন যাপিত জীবনে। ৯২ বছর বয়সে তার মহাপ্রয়াণকে অকাল মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করার কোনো সুযোগ নেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সক্রিয় এবং সচল। তবে একজন সত্যানুসন্ধানী জ্ঞানসাধক হিসেবে তিনি সমাজ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর অভিভাবকসুলভ যে অস্তিত্ব বজায় রেখেছিলেন তার মৃত্যুতে সে শূন্যতা দারুণভাবে অনুভূত হবে। মানবপ্রেমী এ ইতিহাসবিদ ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করেছেন নির্মোহ দৃষ্টিতে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর ছিল তার অগাধ বিশ্বাস। সেই যুববয়সেই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন শোষণমুক্ত সমাজের। এ স্বপ্নই তাকে সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িত হতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালেই তিনি চলে আসেন জন্মস্থান পূর্ববঙ্গে। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। মহান ভাষা আন্দোলনেও এই প্রগতিশীল শিক্ষক বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। ছাত্রসমাজের আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে অনুসরণ করা হতো অনুকরণীয় পূর্বসূরি হিসেবে। স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ রচনায়ও এই মহান শিক্ষকের ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান, সুসম্পর্ক ও মিলনের তত্ত্বকে তিনি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিভেদের পথকে পাশ কাটিয়ে সর্বক্ষেত্রে ঐক্য ও সমন্বয়ের পথে চলাকে তিনি কর্তব্য বলে মনে করতেন। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তার অবদান উত্তরসূরিদের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে আগামী দিনগুলোতেও অবদান রাখবে। প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী এই জ্ঞানসাধক দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর মমত্ববোধের অধিকারী ছিলেন। রাজনৈতিক সচেতন এ শিক্ষাবিদের গবেষণা, পড়াশোনা এবং পাঠদানের ক্ষেত্রে মানুষ এবং মানবিক চিন্তাচেতনা প্রধান প্রতিপাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তিনি মানবিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা এই যশস্বী শিক্ষাবিদের মহাপ্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ সত্যনিষ্ঠ এই জ্ঞানতাপসকে বেহেশতের সুশীতল স্থানে ঠাঁই দিন। আমিন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর