বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা

নাটোরের বড়াইগ্রামে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ৩৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে ছয়জন সহোদরও রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কাছে মানুষ কতটা অসহায় এ যেন তারই প্রমাণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫ জনের মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ বছরে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বছরে গড়ে বাংলাদেশে ১২ হাজার লোক নিহত ও ৩৫ হাজার লোক আহত হন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে নিহতের হার সবচেয়ে বেশি। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশ যে বিশ্বের অন্যতম সড়ক দুর্ঘটনার দেশ এ সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতির জন্যও ডেকে আনছে সর্বনাশ। এ ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মোট জিডিপির দুই শতাংশ। চলতি বছর ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬ জন মারা গেছেন। গত ঈদুল ফেতরের সময় এ সংখ্যা ছিল ৯৬। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, মহাসড়কের ৪ শতাংশ এলাকায় শতকরা ৩৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। নাটোরে সোমবারের দুর্ঘটনাটিও ঘটেছে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায়। দেশে সংঘটিত শতকরা ৬৯ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া বাস ও ট্রাকচালকরা দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া আচরণ দায়ী হলেও চালকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাস-ট্রাক মালিক ও চালকদের শক্তিশালী সংগঠনের সঙ্গে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্কের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এ জন্য সংশ্লিষ্ট চালকদের শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। আইনের ফাঁক গলিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেও ঘাতক যানবাহন চালকরা পার পেয়ে যায়। নাটোরের বড়াইগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুলসংখ্যক যাত্রীর হতাহতের ঘটনা এ আপদের রাশ টেনে ধরার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। আমরা এ কলামে বারবার বলেছি বাস-ট্রাক চালকরা একটু সচেতন হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর যে স্তূপ সৃষ্টি হচ্ছে তা কমিয়ে আনা সম্ভব। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যত্নবান হবে আমরা তেমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর