বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

জাতির দায় মোচন

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১৬টি অভিযোগের আটটি প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তির এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এটি দশম রায়। এর আগে নয়টি মামলায় জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান আট নেতা এবং বিএনপির দুই নেতাকে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আইনি লড়াইয়ের এ সিদ্ধান্ত নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ থাকলে উচ্চ আদালতে তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে। এ সুযোগ গ্রহণের পাশাপাশি আজ এবং আগামী রবি ও সোমবার হরতাল ডেকে একটানা পাঁচদিন দেশের জনজীবনকে স্তব্ধ করার যে প্রয়াস জামায়াতে ইসলামী চালাচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। মুক্তিযুদ্ধকালে মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের শীর্ষ নেতা। বুদ্ধিজীবী হত্যায় ছাত্রসংঘের জড়িত থাকার বিষয়টি গত ৪৩ বছর ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। স্মর্তব্য, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরের বছর ৯ জানুয়ারি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২৮ মে মানবতাবিরোধী ১৬টি অভিযোগে নিজামীর বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে সাক্ষ্য-প্রমাণে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অন্যগুলোতে সংশয় থাকায় ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেননি। নিজামীর রায়ের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় মোচনে জাতি আরও এক ধাপ এগুলো। দেশে আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধে কেউ যাতে জড়িত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনালের এ দৃষ্টান্তমূলক রায় অবদান রাখলে তা হবে এক বিরাট অর্জন।

সর্বশেষ খবর