শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

অবাঞ্ছিত হরতাল

একাত্তরের আলবদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের প্রতিবাদে আহূত তিন দিনের হরতাল দেশের ২১ লাখ নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বিপাকে ফেলেছে। ২ নভেম্বর থেকে নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। ২ ও ৩ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামী হরতাল ডাকায় পরীক্ষার্থীরা মানসিক চাপের মধ্যে পড়েছে। সভ্য সমাজে আদালতের রায় অবনত মস্তকে মেনে নেওয়া হয়। কোনো রায়ের সঙ্গে দ্বিমত হলে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। একাত্তরের আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবীরা তাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের রায়কে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন এবং এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হলেও আদালতের রায়ের প্রতিবাদে হরতাল ডাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সভ্য মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কামনা করা যায় না। তবে স্বদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধকে যারা বৈধ বলে মনে করে তাদের কাছে ন্যায়বোধের আশা করা বৃথা। একদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি, অন্যদিকে আদালতের রায় অগ্রাহ্য করতে হরতাল আহ্বান ডাবল স্ট্যান্ডের নামান্তর। এই ডাবল স্ট্যান্ড ২১ লাখ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীই নয় দেশের কোটি কোটি মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। তাদের স্বাভাবিক জীবন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। হরতাল প্রতিবাদ জানানোর সংবিধান স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। কিন্তু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান বর্বর সমাজেই কল্পনীয়। দেশের ২১ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের অতিগুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষার দিনে হরতাল ডেকে জামায়াতে ইসলামী যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এ হরতালের মাধ্যমে তারা নিজেদের যে আত্দপরিচিতি তুলে ধরেছে তা তাদের জন্যও সুখকর নয়। আদালতের রায়ের সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই। এটি জানা সত্ত্বেও জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা প্রতিহিংসাপরায়ণতারই নামান্তর। এই মজ্জাগত অভ্যাস থেকে তাদের সরে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর