শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ধর্ম

আশুরার দিনে করণীয় ও বর্জনীয় আমল

মুফতি আমজাদ হোসাইন

আরবি ১২ মাসের মধ্যে প্রথম মাসটির নাম মহররম (সম্মানিত)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমান ও জমিন সৃষ্টি দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি (জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব) সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা তাওবা :৩৬) অর্থাৎ সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই বছরে আরবি ১২ মাস ধার্য হয়েছে, যা লওহে মাহফুজে লেখা রয়েছে। তার বাস্তবায়ন আকাশ-জমিন সৃষ্টির দিন থেকে হয়েছে। তবে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব সম্মানিত এবং রবকতপূর্ণ মাস। ইমাম জাসসাস (র.) 'আহকামুল কোরআন' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সম্মানিত চার মাসের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য মাসে নেই। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করলে অন্য মাসগুলোতেও ইবাদত বন্দেগির তাওফিক ও সাহস লাভ করা যায়। এ মাসগুলোর মধ্যে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে অন্যান্য মাসেও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আদত গড়ে উঠে। এমনকি মহররম মাসের দশ তারিখ, যাকে আমরা আশুরার দিন হিসেবে জানি। বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সৃষ্টির কারণে দিনটি মানুষের মাঝে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছে। আল্লামা ইবনে নাবাতা (র.) তার খুতবাতে উল্লেখ করেন, এদিনে আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল করেন। এ দিনেই হজরত নূহ (আ.) ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পেয়ে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.) জালেম নমরুদের আগুন থেকে, হজরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরাইলরা ফেরাউন এবং তার বাহিনী থেকে নাজাত লাভ করেন। হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা এ দিনেই তার কাছে উঠিয়ে নেন। এ ধরনের বহু বড় বড় ঘটনাবলির কারণে দিনটির সম্মান ও মর্যাদা সুস্পষ্ট। ঘটনাক্রমে এ দিনেই কারবালার প্রান্তরে রসুল (সা.)-এর আদরের নাতি, কলিজার টুকরা, নয়নের মণি ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। যা অত্যন্ত নির্মম, নির্দয় ও দুঃখজনক স্মৃতি। মানব ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কিন্তু উলি্লখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এ দিনের সম্মান শুধু কারবালার ঘটনার কারণেই নয়, বরং তার বহু ঐতিহাসিক কারণ, রসুল (সা.)-এর বাণী ও আমল রয়েছে। হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, রসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এসে দেখলেন এখানের ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তিনি জানতে চাইলেন, তারা এ দিনে রোজা রাখে কেন? উনাকে জানানো হলো, যেহেতু এ দিনে হজরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরাইলরা সমুদ্র পার হয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনী থেকে মুক্তি পেয়েছেন, তার শুকরিয়া হিসেবে তিনি ও বনী ইসরাইলরা এ দিনে একটি রোজা রাখতেন। তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে ইহুদিরাও এ দিনে রোজা রাখতে শুরু করেছে, তার ধারাবাহিকতায় মদিনার ইহুদিরাও রোজা রাখে। রমুল (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের (ইহুদিদের) থেকে মূসা (আ.)-এর অনুসরণ বেশি করব। তিনি নিজেও এ দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখতে বলেছেন। ইবনে মাজাহ শরিফের এক হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যদি কোনো ব্যক্তি আশুরার দিন রোজা রাখে, তাহলে তার আগের এক বছরের ছগিরা গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেবেন। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে আশুরার দিনের রোজার সঙ্গে নয় তারিখ বা এগারো তারিখ যুক্ত করে মোট দুটি রোজা রাখার আদেশ দেব। যাতে মুসলমানদের ইবাদত ইহুদিদের ইবাদতের সঙ্গে মিলে না যায়।

লেখক : খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বারিধারা ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর