রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

তাওহিদের বিশ্বাসই বিশ্ব শান্তির একমাত্র উপায়

মুফতি আমজাদ হোসাইন

তাওহিদের বিশ্বাসই বিশ্ব শান্তির একমাত্র উপায়

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাকারা : ২১) ওই সূরার ২৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মতো একটি (ক্ষুদ্রতম) সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সেসব সাহায্যকারীকেও সঙ্গে নাও (যাদের তোমরা আহ্বান কর)। যদি তোমরা (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হয়ে থাক। এখানে ১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা আশ্রাফুল মাখলুকাত তথা সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ করে বলছেন, কামিয়াবি ও সফলতা একমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করার মধ্যে নিহিত রয়েছে। ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাঁর ক্ষমতার কিঞ্চিৎ বয়ান দিয়েছেন, হে মানবজাতি তোমরা যদি এত ক্ষমতা রাখো, তাহলে আমি তো পূর্ণ সূরা নাজিল করেছি, তাতে কারও সাপোর্ট বা সহযোগিতার প্রয়োজন হয়নি। তোমরা এর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম একটি সূরা বা আয়াত রচনা করে দেখাও না দেখি? যদি তোমরা তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাক। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের পক্ষে তা সম্পাদন করা কখনো সম্ভব নয়। কারণ স্রষ্টার কাজ কখনো সৃষ্টি করতে পারে না।

আজ সমগ্র বিশ্ব বড় পেরেশান। সবাই শান্তি আনয়নের পেছনে দৌড়াচ্ছে। কোন পথে শান্তি আসতে পারে তার জন্য নতুন নতুন পন্থা ও ফর্মুলা আবিষ্কার করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে মানববিধ্বংসী হাতিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে মানবনিধনের যতগুলো হাতিয়ার তৈরি করা হয়েছে অন্য কোনো প্রাণী নিধনের জন্য এত হাতিয়ার তৈরি করা হয়নি। মানুষের স্বভাব চরিত্র ঠিক করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করার উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এখন এখানে দেখার বিষয় হলো, এত কিছুর পরও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসছে কি? না, তা আসছে না। তার একমাত্র কারণ মানবজাতি যে ধারায় পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল, সে পথে পরিচালিত না হয়ে ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের জন্য প্রয়োজন ছিল এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করা। তাঁর বাতলানো পথে পরিচালিত হওয়া। আল্লাহপাক এ দুনিয়াকে মানবজাতির পরীক্ষার হল বানিয়েছেন। পরীক্ষার হলে এক ছাত্র খাতায় অনেক কিছু লিখেছে। কিন্তু তার মূল বিষয় বাদ পড়েছে। এ ছাত্র যেমনিভাবে আশানুরূপ নম্বর পাবে না, অনুরূপ আল্লাহর দেওয়া জমিনে তাঁর হুকুম মোতাবেক পরিচালিত না হলেও প্রকৃত শান্তির আশা করা যায় না। ইসলামের মৌলিক আকিদা শুধু আল্লাহকে একক হিসেবে বিশ্বাস করার নামই নয়, বরং মানুষকে মানবতা ইনসানিয়াত শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত অর্থে মানুষ হিসেবে গঠন করার উপায়ও বটে। ইসলামের শিক্ষাই সমাজে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সুস্থ-সবল একটি সমাজ জাতিকে উপহার দেয়। মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেয়। সব ধরনের সংকটে জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। সমাজ থেকে সব ধরনের অন্যায়-অনাচার, শিরিক-বেদআত, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দূর করে। কেননা আল্লাহকে একক সত্তা হিসেবে স্বীকার করার সারমর্ম হলো মানবজাতি নিজের অস্তিত্বের তামাম কিছু আল্লাহর ইচ্ছাশক্তির ওপর সমর্পণ করে, পরিণামে আল্লাহপাক তাদের ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা দান করেন। ইহকালীন সফলতা হলো যতদিন তিনি মানবজাতির জন্য হায়াত মঞ্জুর করেছেন, ততদিন শান্তি-শৃঙ্খলায় দিনাতিপাত করা। আর পরকালীন সফলতা হলো জান্নাত। পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- আপনি বলুন! আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই, আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম : ১৬২-৬৩)।

বস্তুত, আল্লাহর দেওয়া হায়াতকে তাঁর মালিকানাধীন জমিনে তাঁর মর্জি মোতাবেক পরিচালনা করার নামই হলো আনুগত্য। এখন যদি মানবজাতি এ বিষয়টিকে বিবেকবুদ্ধি, বিচার বিশ্লেষণ করে অনুধাবন না করে, তাহলে একদিন আল্লাহর কাছেই মানবজাতির ফিরে যেতে হবে এবং তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেবেন। তখন তারা কি উত্তর দেবে? সময় যখন চলে যাবে, শত আহাজারি ও কান্নাকাটি করার পরও সে সময় আর ফিরে আসবে না। যায় দিন কখনো ফিরে আসে না। কবির ভাষায় বলা যায়, তুমি যেমন ইচ্ছা তেমন কর (মন চাহে জিন্দেগি চালাও)। জান্নাতও আছে, দোজখও আছে, বিশ্বাস না হলে মরে দেখ। পরিশেষে সে কথাটির পুনরাবৃত্তি করতে চাই, বিশ্ব শান্তি একমাত্র আল্লাহর একাত্ববাদের বিশ্বাস ও তদানুযায়ী জীবন পরিচালনা করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে চিরশান্তির সুশীতল ছায়াতলে স্থান করে দিন। আমিন।

লেখক : খতিব, মুহাদ্দিস : জামেয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর