শিরোনাম
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক সহিংসতা

বাংলাদেশকে বলা হয় অমিত সম্ভাবনার দেশ। মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও গত চার দশকে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে তাতে এ অভিধাকে যথার্থই বলা যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির গবেষকদের ধারণা, আগামীতে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের একটি বলে পরিচিত হবে বাংলাদেশ। রক্তের দামে যে জাতি তার স্বাধীনতাকে কিনেছে তাদের জন্য এ ধরনের মূল্যায়ন কাঙ্ক্ষিতই বটে। তারপরও শুরু থেকেই আশঙ্কার কালো মেঘ বাংলাদেশের আকাশকে বার বার গ্রাসের চেষ্টায় রত। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে চাই গঠনমূলক রাজনীতি। যে রাজনীতি জাতিকে স্থিতিশীলতা উপহার দেবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাদের দেশে সে ধরনের রাজনীতির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। তার বদলে ক্রমশই থাবা বিস্তার করছে সহিংসতার রাজনীতি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের 'শাসন পরিস্থিতি, বাংলাদেশ-২০১৩ : গণতন্ত্র, দল, রাজনীতি' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩তম। প্রতিবেদনে এ পরিস্থিতির জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে দুই হাজার ৭২৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৫১৯ জন। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ১৮০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে শুধু ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালে এক বছরেই নিহত হয়েছেন ২৭৩ জন, যা আগের চার বছরের চেয়ে বেশি। আহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭০২ জন। ভাঙচুর করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৯টি যানবাহন, দোকান, বাড়ি ও ঘর। আগুনে পুড়েছে ৫১৪টি যানবাহন ও দোকান। এই সহিংসতার জন্য দায়ী করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতকে। সহিংসতায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে একক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ দেড় হাজার সহিংসতার মধ্যে ৮৯৪টিতে জড়িত শাসক দল। গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কারণেই ২৭ ভাগ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিতই শুধু নয়, জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় অগ্রগতির জন্য বাধা বলেও বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। দেশের স্বার্থে এই অপরাজনীতি পরিহার করে গণতন্ত্র ও সমঝোতার রাজনীতির অন্বেষণে জাতিকে ব্রতী হতে হবে। সেটিই আজ সময়ের দাবি।

সর্বশেষ খবর