সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

শীত ইবাদতের বসন্তকাল। যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : 'শীতকাল মোমেনের জন্য গণিমত'। মানবসেবাও একটি ইবাদত। শুধু ইবাদত নয়, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান মানবসেবা। মানবসেবায় ত্রুটি হলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। জিজ্ঞাসিত হতে হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্র সম্পর্কে, ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা সম্পর্কে। মানবসেবা, মানবকল্যাণ এবং জনহিতকর কাজকে গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম। ইসলামে মানবসেবা বা পরোপকারকে সর্বোত্তম গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, 'যদি তোমরা দান-সদকাহ বা সাহায্য-সহযোগিতা প্রকাশ্যে কর তাও ভালো। আর যদি এমন কাজ গোপনে বা অপ্রকাশ্যে কর, তা আরও ভালো। কোরআনুল কারিমের সূরা কসাস-এর ৭৭ নম্বর আয়াতে জগৎ-সংসারের মালিক বলেছেন, তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি তেমনি অনুগ্রহ কর যেমনি আমি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছি। প্রতি বছর অনেক অসহায় মানুষ শীতের এই নির্মম কষ্টে মারা যায়। রাজপথের এসব মানুষের একবেলা খাবারের ঠিক নেই তারা কীভাবে শীতবস্ত্র পরিধান করবে বর্তমানের এই সময়ে? তারা রাত কাটায় পথে-প্রান্তরে, তাদের শিশুদের নিজেদের বুকের ভিতর নিয়ে শীতের রাত পাড়ি দেয়। বৃৃদ্ধরা ধুঁকে ধুঁকে পাঞ্জা লড়ে নির্মম প্রকৃতির সঙ্গে। তারা সমাজের ফেলে দেওয়া একটি অঙ্গ, তারা সমাজের অসহায় মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব কি প্রতিটি মুমিনের কাজ নয়! একজন মুসলমান হিসেবে মানবকল্যাণমূলক কাজে জড়িত থাকা, মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা ইমানি দায়িত্ব। মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। প্রচণ্ড এক শীতের রাতে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবুদ্দারদা (রা.)-এর বাড়িতে কিছু লোক মেহমান হলেন। তিনি গরম খাবার দিয়ে তাদের মেহমানদারি করলেন। যখন ঘুমানোর সময় হলো তখন মেহমানরা দেখলেন যে, সে কক্ষে লেপ বা কম্বল নেই। তাদের একজন বললেন, আমি আবুদ্দারদা (রা.)-এর কাছে তা বলি। অপরজন বাধা দিলেন। কিন্তু তিনি গিয়ে হজরত আবুদ্দারদা (রা.)-এর কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি শুয়ে পড়েছেন এবং তার গায়ের ওপর একটিমাত্র পাতলা কাপড়, যা ঠাণ্ডা প্রতিহত করতে পারে না। তিনি আবুদ্দারদা (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা যেমন শীতের কাপড় ছাড়া রাতযাপন করছি, আপনাকেও তো তেমনি দেখছি। হজরত আবুদ্দারদা (রা.) বললেন, আমাদের অন্য একটি বাড়ি আছে। আমরা যা কিছু সংগ্রহ করতে পারি তা সেখানে পাঠিয়ে দিই। এ বাড়িতে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা অবশ্যই তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতাম। আর ওই বাড়িতে যাওয়ার পথ বড় দুর্গম। হালকা ও বোঝাহীন ব্যক্তি বোঝাবাহী ভারী ব্যক্তির চেয়ে অনেক সহজে সেই পথ অতিক্রম করতে পারবে। তাই আমরা আমাদের বোঝা হালকা করতে চেয়েছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে কনকনে শীত পড়ছে। এই শীতে গ্রামের গরিব কৃষক ও রাজপথের দরিদ্র্য মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে প্রয়োজন আমাদের ইমানের দাবি পূরণ করা। শীতের আহ্বানে এগিয়ে আসা মানুষের সেবায়। আল্লাহ আমাদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ইমানি দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

[তারাব পৌরসভায়, ১২ ডিসেম্বর আবদুল বাতেন মিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এক বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশবিশেষ]।

 

 

 

সর্বশেষ খবর