মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য

বাড়ি ভাড়ায় চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য। মানুষ যা আয় করছে তার সিংহভাগ তুলে দিচ্ছে বাড়িওয়ালাদের হাতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাতেও পার পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে এ সম্ভাবনার কথা মনে রেখে নতুন বছরে আরেক দফা বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাড়িওয়ালা নামের নব্য সাইলকরা। গত দুই দশকে সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স এক পয়সা না বাড়ালেও এ সময়ে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে অন্তত ছয় গুণ। বাড়ি ভাড়া দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। ঢাকার সব সংসদ সদস্যসহ যারা যখন সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা নিজেরাও বাড়ির মালিক হওয়ায় ভাড়াটিয়াদের বদলে বাড়ির মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকেই তারা প্রাধান্য দিয়েছেন এমন তির্যক সমালোচনাও করে থাকেন কেউ কেউ। দেশে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন থাকলেও রাজধানীতে তার কোনো কার্যকারিতাই নেই। আইন অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানোর কোনো এখতিয়ার এককভাবে বাড়িওয়ালার থাকার কথা নয়। বাড়ি ভাড়া বাড়াতে হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হয়। স্মর্তব্য, ঢাকা সিটি করপোরেশন কয়েক বছর আগে রাজধানীকে ১০টি এলাকায় ভাগ করে বাড়ি ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত বাড়ি ভাড়া কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত বাড়ি ভাড়ার চেয়ে এখন গড়ে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামাফিক শর্তারোপও করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রও হয় না। বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব ডিসিসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকলেও সমন্বয়ের অভাবে তা ভাড়াটিয়াদের কোনো উপকারেই আসছে না। ভাড়াটিয়ারা অসংগঠিত হওয়ায় এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় বাড়িওয়ালাদের পক্ষে যাচ্ছেতাই মনোভাব দেখানোর সুযোগ ঘটছে। রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে নৈরাজ্য চলছে তা সত্যিকার অর্থেই উদ্বেগজনক। মানুষ তাদের আয়ের সিংহভাগ বাড়ি ভাড়ার পেছনে ব্যয় করবে, এটি কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা হতে পারে না। রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের স্বার্থে সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবতে হবে। বাড়িওয়ালাদের ট্যাক্স ফাঁকি নিয়ন্ত্রণে ২৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া হলে ব্যাংকের মাধ্যমে তা পরিশোধের বিধান জারি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ থেমে যায় বাড়িওয়ালাদের চাপে। আমরা মনে করি, বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্যর জন্য সরকারের প্রশ্রয়দানের নীতি অনেকাংশে দায়ী। ভাড়াটিয়াদের প্রতি সরকারের দায়বোধ সৃষ্টি হলে বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং আমরা তেমনটিই দেখতে চাই।

 

 

সর্বশেষ খবর