সোমবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

মানুষের ওপর রাগ ঝাড়ছে কারা

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

মানুষের ওপর রাগ ঝাড়ছে কারা

জামায়াত-বিএনপির হরতাল অবরোধকারীরা নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে তাকে এক কথায় বীভৎস ও ভয়াবহ বলা যায়। রাজনীতির নামে, আন্দোলনের নামে তারা যা করছে সেটিকে ধিক্কার জানানোর কোনো ভাষা সভ্য মানুষের কাছে নেই। আদি ও বর্বর ভাষাই তাদের জন্য প্রযোজ্য। অবরোধ আহ্বানকারী দলের ক্যাডার বাহিনী ও ভাড়া করা গুণ্ডা সন্ত্রাসীরা এ পর্যন্ত যে বর্বরতা চালিয়েছে তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা ও সচিত্র প্রতিবেদন প্রতিদিন টেলিভিশন এবং পত্রিকায় আমরা সবাই দেখছি। তাই প্রতিটি ঘটনার বর্ণনা এখানে নিষ্প্রয়োজন। তবে নিজ হৃদয়ের সান্ত্বনার জন্য দুটি ঘটনার সামান্য উল্লেখ না করে পারছি না। গত ১৮ জানুয়ারি রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় একটি যানে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। আগুনে দগ্ধ হয় আড়াই বছরের শিশু সাফিন এবং ডাক্তার দম্পতি শিশুটির বাবা-মা। ব্যান্ডেজে পেঁচানো এই শিশুর ছবি দেখে মনে হয়েছে, আক্রমণকারীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে ব্যান্ডেজের মধ্যে আটকে রাখতে চাইছে। সাফিনের বাবা-মার করুণ মুখায়বের ছবিতে ফুটে উঠেছে ক্ষমতালোভী রাজনীতিকদের কাছে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র এবং অসহায় মনের হাজারও প্রশ্ন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে। এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ছোড়া পেট্রলবোমার আগুনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মা মনোয়ারা বেগম। একবিংশ শতাব্দীর অপার সম্ভাবনাময় একটি ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। মায়ের গর্ভ শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তাই ব্যথিত হৃদয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি রাজনীতি, নির্বাচন, ভোট বা আন্দোলনের নামে এই মর্মান্তিক ও অমানবিক অপকর্ম যারা করছে তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। এরা দেশ, জাতি এবং মানবতার শত্রু। এরা আজ ক্ষমতার লোভে অন্ধ। মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, এমন রাজনীতি, নির্বাচন বা গণতন্ত্র আমরা চাই না। কারণ মানুষের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা। এর ঊর্ধ্বে কোনো কিছুর স্থান নেই। রাজনীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচন সব কিছু ওই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের উপায় বা পন্থা মাত্র। পন্থা বা উপায় কখনো চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে বড় হতে পারে না। কারণ সেই পন্থা চূড়ান্ত লক্ষ্যকে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ইংরেজিতে বলা হয়- Means can never, ever be bigger than ends. আমাদের রাজনীতিকরা মানুষের এমন আকুতির কথা কি শুনতে পারছেন, মনে তো হয় না। শুনতে পারলে নিরীহ মানুষ, শিশু নারী হননের হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হতো না। সাম্প্রতিক সময়ের এবং অতীতের অগণিত রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ঘটনা আমাদের সবার জানা আছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আন্দোলন আরব বসন্তের ঘটনা প্রবাহের লাইভ সম্প্রচার দিন-রাত ভরে দেখেছি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের মানুষ ও পুলিশের সংঘর্ষে ওই নির্দিষ্ট আন্দোলনের জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওই নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে সাধারণ মানুষ বা কোনো যানবাহনের ওপর আক্রমণের একটি ঘটনাও নেই। সেই আন্দোলনও সফল হয়েছে। কারণ সেই আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ছিল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের অভিযোগ ও অসন্তুষ্টি থাকা স্বাভাবিক, তা কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু সেই অসন্তুষ্টির প্রতিকারের জন্য শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল, পন্থা ও পথ বের করার মতো যোগ্যতা ও মেধা রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিকদের থাকতে হবে। সেই মেধা ও যোগ্যতা যাদের নেই তারা রাজনীতি থেকে বিদায় হোন। দয়া করে মানুষকে আর জ্বালাবেন না। অনেক হয়েছে। মানুষ আপনাদের কাছ থেকে মুক্তি চায়। বাংলাদেশে মেধাবী মানুষের অভাব নেই। কিন্তু তারা জায়গা পাচ্ছে না আপনাদের মতো ক্ষমতালিপ্সু, অন্ধ দুর্নীতিবাজদের জন্য।

জ্বালাও-পোড়াওয়ের ষোল-সতের দিনের মাথায় দুই ডজনের ওপর মানুষের মৃত্যু, হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে আরও দুই ডজনের কাতরানি এবং হাজারও কোটি টাকার সম্পদের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নেতা-কর্মী এসব ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত নয়। এমন আপ্তবাক্য ও নির্মম প্রহসনের বিবৃতি মানুষ আর শুনতে চায় না। বিএনপির পক্ষ থেকে এই বিবৃতিটি যেদিন দেওয়া হয় ওই দিন রাজধানীর লালবাগে একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বাপ্পী গুরুতরভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই বোমারুর সঙ্গে গুরুতর আহত হয়েছে তার দুই শিশু ভাগ্নে-ভাগি্ন। একই দিন বনানী থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে গান পাউডার, ককটেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ। তারপর টেলিভিশনের ক্যামেরার বদৌলতে মানুষ চর্মচোখে দেখতে পাচ্ছে জামায়াত-বিএনপির অবরোধকারীরা ব্যানারসহকারে কীভাবে অতর্কিত আক্রমণ করছে মানুষের ওপর এবং জ্বালিয়ে দিচ্ছে যানবাহন। মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যারা জীবনের ও সম্পদের নিরাপত্তার জিম্মাদার তারা কেন নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের অভাব আছে কিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এই খুনিদের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য দায়বদ্ধ। সন্ত্রাসের অজুহাতে কোনো রাজনৈতিক আপস হবে দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সংকেত। কারণ তাহলে আগামীতে সব রাজনৈতিক দলই নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যার পথ বেছে নেবে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। কোনো অজুহাতেই সেটি কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্র যেন সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনো আপস না করে তার জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ শুধু বিএনপি নয়, এত বড় ভয়ঙ্কর উদাহরণ ক্ষমতার বাইরে থাকা যে কোনো দল ভবিষ্যতেও ব্যবহার করতে পারে। তাহলে এর আর কোনো শেষ হবে না, বাড়তেই থাকবে। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শুরুতে নকশালের মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কঠোর হস্তে দমন করতে শতভাগ সক্ষম হয়েছে। এসব উদাহরণের দিকে তাকাতে হবে।

আমরা পরিস্থিতির বিচার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করি দৃশ্যমান ঘটনা প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে। রাজনীতিতে অনেক গূঢ় রহস্য ও গোপনীয় বিষয় থাকে যা বাইরে থেকে জানা সম্ভব নয়। তাই আমাদের মূল্যায়ন সব সময় শতভাগ সঠিক হবে এমন কথা নেই। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে পাঠকদের চিন্তার খোরাক জোগানো। জন্মের শুরু থেকে বিএনপির যাত্রা শুরু হয় জামায়াত ও একাত্তরের পাকি সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু দলে কিছু মুক্তিযোদ্ধা থাকার ফলে ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত একটা ভারসাম্য বিএনপির মধ্যে ছিল। ১৬ কোটি মানুষের দেশে তাদের প্রায় ত্রিশ শতাংশ জনসমর্থন আছে। ৩৬ বছরের বয়সী একটি দল ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেছে, এমন উদাহরণ খুব কম রাজনৈতিক দলের আছে। এটা তাদের জন্য বিরাট অর্জন। কিন্তু বিএনপির বিগত দুই-তিন বছরের কার্যকলাপ দেখে মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা এত উন্মাদ হয়ে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে কেন? নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা এখনো চিরদিনের জন্য বিনষ্ট হয়ে যায়নি। রাজনীতিতে হঠকারিতা ও ধৈর্যচ্যুতির কোনো স্থান নেই। ২০১৯ সাল, পরবর্তী নির্বাচন বেশি দূরে নয়। এসব বোঝার মতো অনেক প্রাজ্ঞ মানুষ বিএনপিতে আছে। তাই সব জেনে ও বুঝে তারা যখন আত্দবিনাশে এবং দেশের মানুষ ও সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে তখন মনে হয় তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বোধ হয় এখন আর নিজেদের হাতে নেই। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, কাদের মোল্লার রায় বের হওয়ার আগের দিন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে জামায়াত ঘোষণা দেয় কাদের মোল্লার কিছু হলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে এবং সারা দেশে আগুন জ্বলবে। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরও আটজন ফাঁসির কাতারে আছে। তাই জামায়াত-শিবির দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধাবে, আগুন জ্বালাবে সেটি এমন কিছু অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু জামায়াতের শক্তি এখন ক্ষয়িষ্ণু। গত দুই বছরে দেখা গেছে বিএনপিকে জামায়াত সঙ্গে না পেলে তারা এখন আর আগের মতো জঙ্গিপনা দেখাতে পারে না। জামায়াতের সদর দফতর এখনো যে ইসলামাবাদ তার প্রমাণ তো আরও একবার পাওয়া গেল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর। শর্টকাট রাস্তায় ক্ষমতায় আরোহণের পথ দেখিয়ে জামায়াত কি বিএনপিকে পক্ষান্তরে ইসলামাবাদের চক্রান্তের জালে আটকে ফেলেছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বেশি পেছনে যাব না। ২০০১ সাল পরবর্তী কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিই। এক. ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌ.) ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য গালি দেওয়ায় বিএপি থেকে বহিষ্কৃত হন। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আবার দলে ফিরে আসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য হন এবং বিএনপি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হওয়ার পর সাকা চৌধুরী পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হন। বিএনপির ওই মেয়াদে সাকা চৌধুরীকে ওআইসি মহাসচিব পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয় এবং তাতে তিনি গোহারা হারেন। কথা হলো বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন আপসহীন ও জেদি নেত্রী সাকা চৌধুরীর সঙ্গে এত নমনীয় হয়ে আপস করলেন কেন? শুধু আপস নয়, দেশের মানমর্যাদা ধূলিসাৎ হবে এমন সতর্ক বার্তা সব পক্ষ থেকে উচ্চারণ করার পরও সাকা চৌধুরীকে ওআইসির মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়। এসবের রহস্য কোথায়? ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে কটূক্তি করার কারণে তৎকালীন পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার ইরফান রাজাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার আদেশ হওয়ার পর ওই কূটনীতিকের বাসায় গিয়ে সাকা চৌধুরী দীর্ঘ শলাপরামর্শ করেন কীভাবে ইরফান রাজাকে বাংলাদেশে রাখা যায়। দুই. ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি একা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও কেন চিহ্নিত দুজন মশহুর যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রিসভায় নিলেন। নির্বাচনী জোট, আর নিজ দলের একক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জামায়াতকে ক্ষমতার অংশী করা এক কথা নয়। তিন. ২০০৮ সালে জরুরি আইনের সরকারের শেষের দিকে সমঝোতার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে জেলের অভ্যন্তরে দীর্ঘ শলাপরামর্শ করেন। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, মুজাহিদ যে পরামর্শ দেবেন তা কি জামায়াতের সদর দফতরের নির্দেশিকার বাইরে হতে পারে। চার. চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গক্রমে একটু উল্লেখ করি। ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার দাবি জানায়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ট্রাইব্যুনালকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেন। তারপর বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবাই তো মুক্তি পাবেনই বরং ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার বিচার করা হবে। সর্বশেষ অবরোধ শুরুর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে যে সাত দফা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আছে সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। তবে রাজবন্দীদের নাম বলা হয়নি।

উপরোক্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে মানুষ যদি মনে করে বিএনপি একাত্তরের পরাজিত শক্তির দূরবর্তী কোনো চক্রান্তের জালের টানে এমন পৈশাচিক নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞে নেমেছে, তাহলে সেটা কি খুব অমূলক হবে। তারপর ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক সম্পর্কিত আঞ্চলিক গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে নীতির মূলমন্ত্র হলো- ভারতকে শায়েস্তা করা এবং একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের এই স্ট্র্যাটেজি মুখ থুবড়ে পড়বে। পাকিস্তান চিরদিনের জন্য পরাজিত হবে। সুতরাং অংকের ইকুয়েশন কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। তবে বিএনপির উপলব্ধি করার সময় এসেছে। কোনো রকম ভান না করে, অজুহাত না দেখিয়ে আন্তরিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দর্শনের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য বিএনপির মতো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠিত একটি দলের টিকে থাকার প্রয়োজন আছে। তাই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞ এখনই, এই মুহূর্তে বিএনপিকে বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে কৌশলে পেরে না ওঠে সাধারণ মানুষের প্রতি ভয়ঙ্কর রাগ ঝাড়া কোনো কাজের কথা নয়। কথায় আছে, 'সেই ভারই বহনীয় যা অবসন্ন করে না, সেই অন্নই ভোজনীয় যা জীর্ণ হয়'।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

 

 

সর্বশেষ খবর