সোমবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

অসৌজন্যকর আচরণ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের বন্ধ দরজার সামনে অপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো দূরের কথা, দরজা বন্ধ রেখে অসৌজন্যতা দেখানো শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, দেশের রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত স্টাফদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শোকে মুহ্যমান সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ওই সময় ইনজেকশন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোর সুযোগ ছিল না। এ বক্তব্য মেনে নিয়েও বলা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না থাকলেও তারা তো প্রধানমন্ত্রীকে ভেতরে নিয়ে সৌজন্য দেখাতে পারতেন। কিন্তু সে ভদ্রতা দেখাতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া শুধু শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয়, অতিথির প্রতি সম্মান দেখানোর বাঙালি সংস্কৃতিরও পরিপন্থী। রাজনৈতিক কিংবা নৈতিক কোনো বিবেচনায় এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। দেশে যখন বিএনপি জোট আহূত অবরোধে প্রায় প্রতিদিন মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সারা দেশকে বার্ন ইউনিটে পরিণত করার অপরিণামদর্শী অপরাজনীতি চলছে, তখন দুই নেত্রীর সাক্ষাৎ রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে- জাতি এমনটিই আশা করেছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতি পারস্পরিক আস্থার ওপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় নব্বইয়ের মহান গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হলেও গণতন্ত্র অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শুধু রাজনীতিক হিসেবে নয়, সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলেন একজন মা হিসেবে। অপরের শোকের দিনে পাশে দাঁড়ানোর মানবিক অনুভূতি নিয়ে। তার প্রতি অসৌজন্যকর আচরণ বাঙালির চিরায়ত মূল্যবোধকে আঘাত করেছে। আমাদের নেতা-নেত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার ও সুসম্পর্ক রাখার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত নন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিএনপি নেতৃত্বের অসৌজন্যতা সেই হীনমন্যতাকে উসকে দিল কিনা তা এখন দেখার বিষয়। এ ভুল শোধরাতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

 

সর্বশেষ খবর