বুধবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমার বন্ধুরা সতর্ক থাকুন

নাদীম কাদির

আমার বন্ধুরা সতর্ক থাকুন

দগ্ধ হওয়া ১৫ বছরের মিনহাজুল ইসলাম অনিককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম অনিক সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করতে অস্বীকার করেছে। বলেছে, এই ভাগ্য সত্ত্বেও সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এটা হচ্ছে প্রতিবাদ। এটা হিম্মত। আমি তাকে অভিবাদন জানাই।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার জোটের বেশির ভাগ চরমপন্থি অংশীদাররা তাদের অজনপ্রিয় কথিত সরকারবিরোধী অবরোধ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিষয়ে যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তখনই এই ধরনের মানবাধিকার সংগঠনগুলো চিৎকার শুরু করে। এখন তারা কোথায়? অবশ্যই তাদের নীরবতা বা চুপ থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে।

মানুষের ভাগ্য, দেশের অর্থনীতি ও ইমেজকে উপেক্ষা করে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্যই কি তাদের জাতীয়তাবাদী বলা হয়! অনিক তাদের কাছে উপেক্ষিত হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এ ধরনের সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা দরকার। ফেনী হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা! এমন দৃশ্য দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিছু মানবিকতা আছে এমন মানুষের জন্য এটা অসহনীয়। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের এই নৃশংস ম্যারাথন হত্যাকাণ্ড শাস্তির বাইরে থাকতে পারে না।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে, ২০-দলীয় জোটের কাছে আমার জানতে ইচ্ছা করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা কি 'গণতান্ত্রিক' বা কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণা হতে পারে? এটা শুধু প্রমাণ করে যে, এখন সন্ত্রাস ও ভয়ভীতি দেখানোর কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। কিন্তু এটা কি তাদের জনপ্রিয় সমর্থন পেতে সাহায্য করবে? আমার সেটা মনে হয় না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও এ ধরনের অন্য সংগঠনগুলো এখন কোথায়? যখন প্রতিদিন রাজনীতির নামে নিরীহ মানুষকে খুন করা হচ্ছে? এটা সম্ভবত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শেষ কামড় ছাড়া আর কিছুই নয়। মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিষয়ে যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তখনই এই ধরনের মানবাধিকার সংগঠনগুলো চিৎকার শুরু করে। এখন তারা কোথায়?

অবশ্যই তাদের নীরবতা বা চুপ থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকারচর্চা বন্ধ করতে হবে।

ঢাকাভিত্তিক কূটনীতিকরা সহিংসতায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এর আগে তারা অন্তত বিএনপিকে সরাসরি অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে বলতে পারেন। তারা যেটা করছেন সেটা এক ধরনের একতরফা খেলা। তাদের অবশ্যই এটা বাছাই করতে হবে যে, তারা কি একটি ধর্মনিরপেক্ষ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চান নাকি ২০০১-২০০৬ সালের মতো সন্ত্রাসী হামলা ও গণতন্ত্রের নামে জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) মতো ইসলামী জঙ্গিবাদ দেখতে চান?

এখানে আমার কূটনীতিক বন্ধুদের চোখে সে সময়ের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো : ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আরও ২৫ জনসহ আহত হন শেখ হাসিনা। ওই হামলায় আইভি রহমান নিহত হন। গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। এ ছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের মতো আরও বহু ঘটনা ঘটে। সরকারের সঙ্গে এই অযৌক্তিক লড়াইয়ের যারা শিকার হচ্ছেন তাদের খবর নিয়মিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এটা একটা শক্তিশালী বার্তা যে, সাধারণ মানুষ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে নেই।

বিশ্বে যারা মানবাধিকারের দেখাশোনার দাবি করেন তাদের একটি শক্তিশালী কণ্ঠ আছে। তারা নিশ্চিতভাবে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে মুহূর্তের মধ্যে আর্তনাদ করবেন কিংবা হত্যাকারীদের শাস্তি প্রদান করা হলে সেটাকে বলবেন 'রাজনৈতিক শিকার'। এটা এক অন্যায্য খেলা এবং এসবের নোট নেওয়া দরকার।

যারা দগ্ধ হয়েছেন তারা হয় একটি পীড়াদায়ক মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা সমপরিমাণ ব্যথা নিয়ে পঙ্গু বা অর্ধপঙ্গু জীবনযাপন করছেন। এসবের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা দরকার। জামায়াত ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের অনুসারী। মনে হচ্ছে বিএনপিও পাকিস্তানপ্রীতি প্রমাণে আগ্রহী। শুধু ১৯৭১ সালেই এ ধরনের বর্বরতা দেখেছিল মানুষ। তারা কি বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান?

পুলিশ, বিজিবি ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর প্রধানরা যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভয়ানক পরিণতির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তখন ২০-দলীয় জোট তার নিন্দা জানায়। এর কারণ কি তারা সন্ত্রাসবাদের সমর্থক অথবা তারা 'সন্ত্রাসী' জামায়াতে ইসলামী দ্বারা প্রভাবিত? জামায়াত এরই মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মনে হচ্ছে, এই তথাকথিত ইসলামী দলটি বিএনপিকেও অধিগ্রহণ করেছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের দায়ে যারা গ্রেফতার হয়েছেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। সরকারের এখন কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ জনগণ এখন সরকারকে তাদের নিরাপত্তা দিতে বলছে।

১৬ কোটি মানুষের দেশে ১০০ খুনির সংখ্যাটা বেশ কম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান অনুযায়ী তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শেখ হাসিনা বলেছেন, এই পেট্রলবোমা বানায় কারা, মারে কারা? যারা মারবে তাদের ধরে ধরে হাতটা পুড়িয়ে দিয়ে পোড়ার যন্ত্রণাটা বোধহয় তাদের বুঝতে দেওয়া উচিত। আমার বন্ধুরা যারা মিডিয়াতে আসছে, আমি মনে করি তাদেরও একটা অবস্থান নেওয়া দরকার। অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের জন্য, আমার জন্য, এটা একটা অন্যরকম মুহূর্ত, যখন একজন পাকিস্তানপন্থি ও সন্ত্রাসকামী সংগঠন এমন একটি দলের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যে দলটি আমাদের স্বাধীনতা এনেছিল। আমাদের ভাষা, ভূমি এবং গর্বের প্রতীক একটি পতাকা এনে দিয়েছিল।

সব অর্থনৈতিক সূচক ভালো লক্ষণ দেখাচ্ছে। বিনিয়োগ সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে, বৈদেশিক সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। তাহলে কেন ক্ষমতার জন্য অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে উল্টারথে ফিরিয়ে নিতে খুনি দলগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে?

গণমাধ্যমকে অবশ্যই ২০-দলীয় জোটকে এসব হত্যাকাণ্ড ও নিরীহ মানুষকে আঘাত করা বন্ধ করতে বলতে হবে। তা না হলে তাদের অবশ্যই মিডিয়া ব্লাকআউটের মুখোমুখি হতে হবে। অর্থনীতিকে আঘাত করা বন্ধ করুন। সাধারণ মানুষ একটি অধিকতর ভালো বাংলাদেশের জন্য কাজ করছেন। অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং রেডিও-টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। আমাদের অবশ্যই তার প্রতি কিছু কৃতজ্ঞতাবোধ দেখানো উচিত। আমি সাধারণভাবে এটা করতে বলছি না। গণমাধ্যমের প্রচার তথা কয়েকটি শব্দ ও কাভারেজ বেগম খালেদা জিয়া ও তার জোটকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি পরে 'গণমাধ্যম নাকি পাগলা গারদ-২' শিরোনামে বিশদ লেখার চেষ্টা করব। সংক্ষেপে, তিনি 'অবরুদ্ধ' এই শব্দটি একটা টেলিভিশন চ্যানেলের এক রিপোর্টারের দ্বারা কথিত। প্রকৃতপক্ষে তিনি উত্তেজিতভাবে পিটিসি (পিস টু ক্যামেরা) দিচ্ছেন। যাতে মনে হচ্ছে সরকার একটা বিশাল ভুল করেছে। কিন্তু ওই রিপোর্টারের আগে জানা উচিত ছিল যে, নিরাপত্তার সমস্যা আছে কি নেই? সঠিক শব্দাবলী হচ্ছে, সরকার বলছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে তার 'চলাফেরা সীমিত' করা হয়েছে। সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তার নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি ফাঁস করতে পারে না। কিন্তু একজন রিপোর্টার এ ধরনের সংবেদনশীল সময়ে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না।

আমার মনে হয়, মিডিয়া কী বলে এবং কখন বলে সে বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য এটাই সঠিক সময়। কারণ তাদের জাতির অপকারের জন্য দায়ী করা হতে পারে। আমরা কি সেটা চাই? অবরোধ কর্মসূচি দলীয় সাংবাদিকতারও একটি ফল। আমাদের সবারই পছন্দের রাজনীতি আছে এবং আমরা এর ঊর্ধ্বে নই। কিন্তু আমি যখন মাঠে যাই, তখন আমার পেশাদার ও সঠিক অবস্থানে থাকা উচিত। অন্যথায় গণমাধ্যম স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা ব্যবহৃত হতে পারে। আমার বন্ধুরা সতর্ক থাকুন।

লেখক : সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার ও লন্ডন হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

 

 

সর্বশেষ খবর