বুধবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা

নরসিংদীতে ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী সাতজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ডাকাতের উৎপাতে পাঁচদোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নিজেরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছিল। গত সোমবার ডাকাত দল একাধিক বাড়িতে হানা দেয়। চাকশাল গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ডাকাতি শেষে পালানোর সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া করে। মসজিদের মাইক থেকে ডাকাত দলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হলে তিন গ্রামের লোক সম্মিলিতভাবে ডাকাত দলকে তাড়া করে। দুই ঘণ্টা ধরে চলে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা। এর ফলে ভাটপাড়া, চাকশাল ও ভড়সাঙ্গাইন গ্রামের দুই কিলোমিটার এলাকায় সন্দেহভাজন সাত ডাকাতের মৃত্যু হয়। আহত এক ডাকাতকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। নরসিংদীর পাঁচদোনা এলাকায় গত কয়েকদিনে অন্তত ১৫টি ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের পরামর্শে এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা বসায়। তারপরও ডাকাতদের উৎপাত না থামায় জনমনে জমে ওঠে চাপা ক্ষোভ। ডাকাতদের গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনা সে ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। ডাকাতি বা দস্যুতা নিঃসন্দেহে এক বড় অপরাধ। এ অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটি আইনানুগ প্রতিটি নাগরিকেরই কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো অবস্থায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দেশে আইনের শাসনে ঘাটতি থাকায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। অপরাধীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া নাগরিক কর্তব্যের মধ্যে পড়লেও তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার অভাবে। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষ জেদি ও একরোখা। ঘৃণা ও ভালোবাসায় তাদের মধ্যে এক ধরনের উগ্রতা কাজ করে। দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে এ উগ্রতার অনাকাঙ্ক্ষিত চর্চার কারণে। সুশাসনের ঘাটতি থাকায় উগ্রতার চর্চা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বাড়ছে চোখ তুলে নেওয়া, গণপিটুনির মতো বর্বরতা। চলমান অবরোধ ও হরতালে ককটেল ও পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বলা হয় প্রতিটি মানুষের মধ্যে মনুষ্যসত্তার পাশাপাশি পশুসত্তাও বিরাজ করে। মনুষ্য সত্তার সঙ্গে পশুসত্তার দ্বন্দ্বও চলতে থাকে মানুষের মধ্যে। নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি এবং সুনীতি চর্চার অভাবে পশুসত্তা বিকশিত হয় এবং নানাভাবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নরসিংদীতে গণপিটুনিতে যারা নিহত হলো তারা অপরাধী তা হলফ করে বলার উপায় নেই। অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দেওয়ার বদলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতায় কখনো কখনো নিরপরাধীরাও প্রতিহিংসার শিকার হন। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর