শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ওবামার ভারত সফর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরকে সারা দুনিয়ায় গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি চীনের কাছে নিজেদের শীর্ষস্থানটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেও সামরিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে তাদের দাপট অপ্রতিরোধ্যই বলা চলে। অন্যদিকে ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বীকৃত। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত ধাবমান হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে তারা। এক সময়ের দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্বের পয়লা নম্বরের অর্থনৈতিক শক্তি এবং বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রতিবেশী হওয়ায় ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যে গুরুত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাতাতেই আগ্রহী। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জাতশত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশ্বস্ত মিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত প্রায় মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বড়ই মধুর। সীমান্ত বিরোধ নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন এবং ভারতের ভূমিকা বহুক্ষেত্রেই অভিন্ন। এই জটিল অবস্থান সত্ত্বেও সমকালীন বাস্তবতাকে মনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক পাতাতে চাচ্ছে এবং বারাক ওবামার ভারত সফরের ফলশ্রুতিতে সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ওবামা ইতিমধ্যে ভারতকে ন্যাটো জোটের বাইরে সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ লাভে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে যে বিরোধ ছিল তা মিটে গেছে ওবামার সফরে। ভারতে সমরাস্ত্র নির্মাণে মার্কিন প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে এ সফরের সময়। ফলে রাশিয়ার ওপর ভারতের সমরাস্ত্র নির্ভরতা অনেকাংশেই কমবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় পাকিস্তান ও চীনের জন্য কিছুটা হলেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের জোরালো স্থান গড়ে তোলার স্বার্থে ভারত দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশীর সঙ্গে সহনশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী হবে এমনটিই আশা করা যায়।

সর্বশেষ খবর