বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ইমানি দায়িত্ব

মাওলানা মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

মানুষসহ বিশ্বজাহানের সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং তিনি সব কিছু পারেন এবং সব সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। আল্লাহর ওপর ভরসা মুসলমানদের মনোবলকে সমুন্নত করে। এই ভরসাই হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে নমরুদের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। প্রতিপক্ষ কয়েক গুণ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা তাদের কোনো পরোয়াই করেনি। কারণ তারা ইমানি শক্তিতে বলিয়ান ছিল এবং একনিষ্ঠভাবে বিশ্বাস করেছে আল্লাহ চাইলে তারা জয়ী হবেন। তারা আল্লাহকে একমাত্র পৃষ্ঠপোষক বলে ভেবেছেন।

ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা সাফল্যের শিখরে উঠতে পেরেছিল আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং অসীম ধৈর্যের কারণে। তারা কোনো অবস্থায় বিচলিত হননি। কোনো অবস্থায় নিজেদের অসহায় ভাবেননি। সবসময় মনে করেছেন আল্লাহ অসীম দয়ালু এবং তিনি তাদের সঙ্গে আছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তখন বলেছিলেন : 'হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল' (আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম পৃষ্ঠপোষক)। এ বাক্যটি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন এমন এক সময় যখন লোকেরা (মুসলমানদের) বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লোকেরা (শত্রু বাহিনী) একতাবদ্ধ হয়েছে, তাদের ভয় কর। এ খবর মুসলমানদের ইমান আরও বৃদ্ধি করে দিল এবং তারা বলল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল (সহিহ বুখারি)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোজাদারের সমতুল্য (তিরমিযী থেকে মিশকাতে)।

যে ব্যক্তি ধৈর্য সহকারে নফল রোজা রাখে এবং যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা সহকারে আল্লাহর দেওয়া হালাল খাদ্য খেয়ে দিনাতিপাত করে, তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে সমান মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর দরবারে শোকরের কত উচ্চ মর্যাদা এ হাদিস থেকে তা অনুমান করা যায়।

আল্লাহর প্রতি শোকর করা মুমিনের অপরিহার্য একটি গুণ। নিজের অবস্থা নিয়ে কোনো হতাশায় ভোগা উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (ধন-সম্পদ, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে) তোমাদের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের, তার প্রতি দৃষ্টিপাত কর এবং যে ব্যক্তি (ওইসব বিষয়ে) তোমাদের চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের তার প্রতি দৃষ্টিপাত কর না। অন্যথায় তোমাদের ওপর আল্লাহর যেসব নিয়ামত রয়েছে তাকে তুচ্ছ মনে করার মনোবৃত্তি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি হবে। অপর বর্ণনায় আছে : তোমাদের কারও দৃষ্টি যখন সম্পদ ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির ওপর পতিত হয়, তখন সে যেন নিজের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করে (মুসলিম থেকে মিশকাতে)।

সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুমিন ব্যক্তির ব্যাপারই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। এটা (সৌভাগ্য) মুমিন ছাড়া আর কারও হয় না। সে দুর্দশাগ্রস্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর। সুদিন দেখা দিলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর (মুসলিম থেকে মিশকাতে)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষের অপছন্দনীয় জিনিস জান্নাতকে এবং আকর্ষণীয় জিনিস দোজখকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (মুসলিম. তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারিমী, মুসনাদে আহমাদ)।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

 

সর্বশেষ খবর