শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সবজি চাষিদের সর্বনাশ

সবজি উৎপাদনে দেশের কৃষকরা গত ৪৩ বছরে যে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তা এখন বিপর্যয়ের মুখে। এ বিপ্লবের বদৌলতে দেশে এখন ৬০ ধরনের ২০০ জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। গত ৪৩ বছরে জনসংখ্যা ১২০ ভাগ বৃদ্ধি এবং চাষযোগ্য জমি অর্ধেকে নেমে এলেও সবজি উৎপাদন বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ। দেশের চাহিদা পূরণের পরও সবজি এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছিল, কালক্রমে সবজি রপ্তানি দেশের বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের অন্যতম খাত হয়ে উঠবে। সবজি রপ্তানির মাধ্যমে কৃষকদের জীবন মানের উন্নতিও নিশ্চিত হচ্ছিল। গত এক বছরেই সবজি রপ্তানি বাবদ ৩৪ শতাংশ আয় বেড়েছে। কিন্তু চলমান হরতাল-অবরোধ সবজি চাষিদের সর্বনাশের শেষ সীমায় ঠেলে দিচ্ছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতে ক্রেতার অভাবে যে দামে কৃষক তাদের পণ্য বিক্রি করছে তা দিয়ে উৎপাদন খরচ উঠানো দূরের কথা সবজি জমি থেকে উঠানো এবং হাটে নেওয়ার খরচও উঠছে না। বর্তমানে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৯ পয়েন্ট ২৯ ভাগ। মোট ৪৭ পয়েন্ট ৫ ভাগ কৃষক সবজি চাষে নিয়োজিত। সবজি চাষে নীরব বিপ্লবের বদৌলতে টমেটো, লাউ, কপি বা যেসব শাক আগে শীতকাল ছাড়া বাজারে পাওয়া যেত না সেগুলো এখন সব মৌসুমে চাষ হচ্ছে। ভোক্তারা সারা বছর ধরে ২০ থেকে ২৫ জাতের সবজি কিনতে পারছেন সহনীয় দামে। গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রতিবছর সবজি চাষের আবাদি জমি বেড়েছে পাঁচ শতাংশ হারে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার মতে, সবজি চাষ বৃদ্ধির এই হার সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ। দেশের এক কোটি ৬২ লাখ কৃষি পরিবারের সবাই কম-বেশি সবজি চাষে নিয়োজিত। এদের কেউ নিজেদের প্রয়োজনে সবজি চাষ করেন, কেউ বাণিজ্যিকভাবে। সবজি রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ দেখিয়েছে যে কৃষকরা, হরতাল-অবরোধের রাজনীতি তাদের উপোস থাকার বিপদ সৃষ্টি করছে। হরতাল-অবরোধে সবজি রপ্তানি যেমন বন্ধ হওয়ার পথে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত সবজির বড় অংশ মাঠে নষ্ট হচ্ছে। কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে দেশের দেড় কোটি কৃষক। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

সর্বশেষ খবর