শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

কোরআনের আকর্ষণ

মুফতি আমজাদ হোসাইন

কোরআনের আকর্ষণ

জগতে যদি সর্বাপেক্ষা আশ্চর্যজনক ও আকর্ষণীয় কোনো গ্রন্থ থাকে, যার আকর্ষণে আকর্ষিত হয়ে এক বর্বর ও যাযাবর জাতি, পৃথিবীর ইতিহাসে যাদের কোনো স্থান ছিল না, তারা একদিন সহসা উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্রমে ধর্মে, কর্মে, জ্ঞানে ও চরিত্রে অনন্তকালের জন্য শান্তির এক সুশীতল ছায়া গ্রহণ করেছিলেন। কেয়ামত পর্যন্ত নিজেদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরের মতো সমুজ্জ্বল রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন, তা কোন মন্ত্রবলে? একজন নিরপেক্ষ অমুসলিম লেখকের উক্তি শুনুন। অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে আমরা একেবারে এ অদ্ভুত গ্রন্থের মূল বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হচ্ছি, যা এমন এক গ্রন্থ যার সাহায্যে আরব জাতি সেকান্দরের সাম্রাজ্য, রোম সাম্রাজ্য অপেক্ষা বৃহত্তর এক সাম্রাজ্য জয় করেছিলেন। অধ্যাপক মার্গোলিউথও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, "পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে যে কোরআনের একটি বিশেষ স্থান আছে তা মানতেই হবে। এ শ্রেণির যুগান্তকারী সাহিত্যের মধ্যে কোরআনের অবদান বেশুমার। জনসাধারণের ওপর অত্যাশ্চর্য প্রভাব বিস্তার কোরআনের অবদান সবার উপরে। তা মানবীয় চিন্তাধারায় প্রায় এক নতুন ভাব সৃষ্টি করেছে এবং নতুন ধরনের চরিত্র গঠন করেছে। কোরআন আরব্য উপদ্বীপের মরুভূমিবাসী কতগুলো পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীকে এক বীরের জাতিতে পরিণত করেছে। অনন্তর এ কোরআন মুসলিম জগতের রাজনীতি ও ধর্মবিজড়িত বিস্তীর্ণ এলাকাসমূহ সংগঠনে সক্ষম হয়েছে। (Prof. Margoliouth in his Introduction to Rodwell’s English Translation of the Koran.)

একজন মুমিন ব্যক্তির কাছে কোরআন আল্লাহর শাশ্বত বাণী। এতে মানবের ইহ-পরকালের সব মঙ্গল নিহিত আছে। এ জন্য কোরআনের হাফেজরা আদ্যোপান্ত সমস্ত কোরআন কণ্ঠস্থ করেন। মুমিনরা কেউ সাত দিনে, কেউ কেউ ত্রিশ দিনে সব গ্রন্থ নিয়মিতভাবে তেলাওয়াত করেন। এ মহা গ্রন্থকে বোঝার জন্য বহু মণীষী আজীবন সাধনা করেছিলেন। তাদের সাধনার ফলে অসংখ্য ভাষায় কোরআন রচিত হয়েছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা কোরআনের তত্ত্ব জানার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তার অনুবাদ করেছেন। এ মহাগ্রন্থের সঙ্গে সবার কম-বেশি পরিচয় থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। কোরআনের অর্থ সুগভীর। বাহ্যিক শব্দ ব্যতীত তাঁর নিগূঢ় অর্থ আছে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, পবিত্র কোরআন সাত প্রকারে অবতীর্ণ হয়েছে। তাঁর প্রত্যেক আয়াতের বাহ্য ও অভ্যন্তরীণ অর্থ আছে এবং প্রত্যেক উদ্দেশ্যের জন্য বিভিন্ন উপায় আছে। (মিশকাতুল মাসাবিহ)। আল্লামা রূমী কতইনা সুন্দর বলেছেন, "যদি তুমি তত্ত্ব অন্বেষণকারী হও, তবে পড়, 'নাহনু নাযযালনা' (অর্থাৎ কোরআন যাহা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে)। যদি হৃদয়ের সংবাদ চাও, তবে পড় 'নাহনু নাযযালনা'। যদি বুদ্ধি হতে লাভবান হতে চাও, প্রেমে আপ্যায়িত হতে চাও, প্রিয়তমের সুধা পান করতে চাও, যদি সাধুতা জানতে চাও কিংবা প্রিয়তমের দর্শনে ইচ্ছুক হও, তবে পড় 'নাহনু নাযযালনা'। শান্তির বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, হে প্রেমিক! তুমি সর্বদা পড় 'নাহনু নাযযালনা'। কোরআন শরিফের প্রকৃত অর্থ জানতে হলে মূল পুস্তক অধ্যয়ন করতে হবে। কিন্তু কেবল এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসী ভক্তিপূর্ণ ঐকান্তিক মন। হাকীম সানাঈ বলতেন, যদি কোরআন হতে কতগুলো অক্ষর ভিন্ন তোমার ভাগ্যে আর কিছুই না জোটে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, কেননা অন্ধ চক্ষে সূর্য থেকে উত্তাপ ভিন্ন আর কিছু লাভ হয় না। পবিত্র কোরআন, কেবল তখনই মানুষের কাছে ধরা দেয়, যখন ব্যক্তি ইমানি রূপ ধারণ করে তাঁর সামনে ধরা দেয়। হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রসুল (সা.) বলেছেন, কোরআন পাঁচ প্রকারে অবতীর্ণ হয়েছে : ১. হালাল (বৈধ) ২. হারাম (নিষিদ্ধ) ৩. মুহ্কাম (স্পষ্ট) ৪. মুতাশাবিহ (রূপক) ৫. মিসাল (দৃষ্টান্ত)। তোমরা বৈধকে বৈধ জানিও, নিষিদ্ধকে নিষিদ্ধ জানিও, স্পষ্টকে কাজে পরিণত করিও, রূপকের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করিও এবং দৃষ্টান্ত হতে উপদেশ গ্রহণ করিও। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রসুল (সা.) ইরশাদ করেন- শিগগিরই লোকদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলামের নাম ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কোরআনের প্রথা ভিন্ন কিছু অবশিষ্ট থাকবে না; মসজিদ সুন্দররূপে নির্মিত হবে, কিন্তু উপদেশ শূন্য থাকবে; তাদের জ্ঞানীরা আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট হবে; তাদের মধ্য থেকে অন্যায় প্রকাশিত হবে এবং তাদের প্রতি তা ফিরে আসবে। (মিশকাত)। এই যুগে কোরআন অনুসরণ ভিন্ন আর কোনো উপায় নেই। হজরত রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যে পর্যন্ত তোমরা তা অবলম্বন করে থাকবে, তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এক. কোরআন দুই. আমার তরিকা (সুন্নাত)। (মিশকাত)। আল্লাহপাক আমাদের পবিত্র কোরআনের আকর্ষণ গ্রহণ করে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদানিয়া, বারিধারা, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর