শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ওয়াসার দুর্গন্ধ পানি

রাজধানীতে সরবরাহকৃত ওয়াসার বিশুদ্ধ পানির মরতবা বোঝা বড় দায়। সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ওয়াসার পানিতে চোখ জ্বলে, ফুটালেও যায় না দুর্গন্ধ। বলা হয়, পানির অপর নাম জীবন। রাজধানীর দেড় কোটি মানুষ টাকার বিনিময়ে ওয়াসার কাছ থেকে কী পানি কিনছে ওই প্রতিবেদনের তথ্যই তার প্রমাণ। ময়লাযুক্ত কালচে রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পানির মরতবা প্রসঙ্গে ওয়াসার কর্মকর্তারা যে সাফাই গেয়েছেন তা প্রহসনের নামান্তর। তারা বলেছেন, শোধন করতে পানিতে বেশিমাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহার হওয়ায় কিছুটা দুর্গন্ধ পাওয়া গেলেও তা নাকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। জনস্বাস্থ্যের প্রতি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কতটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে তাদের বক্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ঢাকা ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তার মাত্র ১৩ শতাংশ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা থেকে নেওয়া। এ পানি পরিশোধনের পর সরবরাহ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, শুধু কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে নয়, রাজধানীর কোথাও কোথাও ওয়াসার পানির লাইনে স্যুয়ারেজের ময়লা পানি একাকার হয়ে যাওয়ায় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অনুমিত হিসাবে রাজধানীতে ওয়াসার পানির অবৈধ সংযোগের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। ওয়াসার কর্মচারীদের যোগসাজশেই এসব অবৈধ লাইন দেওয়া হয়েছে, এটি একটি ওপেন সিক্রেট। এ অবৈধ সংযোগকালে ওয়াসার পাইপলাইন ঠিকমতো মেরামত না করায় যে ছিদ্র থেকে যায় তা দিয়েই স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকে পড়ে। ওয়াসার পাইপলাইনে স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকে পড়ার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ 'কানে দিয়েছি তুলো' নীতি গ্রহণ করেছে। রাজধানীতে পানি সংকট চলছে কয়েক বছর ধরে। পদ্মা অথবা যমুনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে রাজধানীতে সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বার বার বলা হলেও কবে তা বাস্তবে পরিণত হবে স্পষ্ট নয়। নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সরকারের কর্তব্য। এটি দয়া নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার পূরণে কর্তৃপক্ষের নির্বিকার থাকার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের বিশ্বাস, মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজধানীবাসীকে পানি সমস্যা থেকে রেহাই দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে। পানি নিয়ে তামাশার ঘটনা শেষ পর্যন্ত জনক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ালে তা কারোর জন্যই মঙ্গল ডেকে আনবে না।

সর্বশেষ খবর