শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল

সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চালানোর পরিণতিতেই শ্যালা নদীতে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা ঘটে এবং বিশ্বের বৃহত্তম এই বাঁদাবন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ওই দুর্ঘটনার পর শ্যালা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধের দাবি ওঠে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকেও সরকারের ওপর এ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা হয়। সে সময় তাৎক্ষণিকভাবে শ্যালা নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হলেও পরে সেটি খুলে দেওয়া হয় বিকল্প পথ না থাকার কারণে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং ছয় মাসের মধ্যে এটি খনন সম্পন্ন হলে সুন্দরবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী শ্যালা নদীর নৌ চলাচল পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মংলা বন্দরে যাওয়া-আসার জন্য নৌযানগুলো ঘষিয়াখালী চ্যানেলই ব্যবহার করত এবং এটি ছিল তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত পথ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায় একদিকে খননের অভাবে অন্যদিকে রাজনৈতিক টাউটদের কারসাজিতে। ঘষিয়াখালী চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত খালগুলো বন্ধ করে রাজনৈতিক টাউটদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মাছের ঘের ও বিভিন্ন প্রকল্প। মংলা বন্দরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার শুরু হয় শ্যালা নদীর নৌপথ। শ্যালা নদীতে দুর্ঘটনার পর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত সুন্দরবনের দুরবস্থা নিয়ে দেশে-বিদেশে উদ্বেগ দেখা দেয়। নেওয়া হয় ঘষিয়াখালী খাল পুনঃখননের সিদ্ধান্ত। স্পুটনিক গতিতে সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নও শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ঘষিয়াখালী খাল নৌপথ হিসেবে চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ও কম ছিল না। কারণ খাল বন্ধ করে চিংড়ি ঘেরসহ যেসব প্রকল্প গড়ে উঠেছিল তার সঙ্গে ছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক টাউটদের সম্পর্ক। যখন যেমন তখন তেমন কৌশলে বিশ্বাসী টাউটদের সিংহভাগই এখন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। তবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের শুক্রবারের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে সরকার ঘষিয়াখালী চ্যানেল চালুতে বদ্ধপরিকর। চ্যানেলটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবার চালু করা সম্ভব হবে এমন আশাবাদও স্পষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যে। আমরা আশা করব ঘষিয়াখালী চ্যানেল চালু সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। দূষণের হুমকি থেকে রক্ষা পাবে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন।

সর্বশেষ খবর