সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রসঙ্গক্রমে

বেছে নেওয়ার সময় এসেছে

নাদীম কাদির

বেছে নেওয়ার সময় এসেছে

কাজের সময় নিরপেক্ষ হওয়া একজন সাংবাদিকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের সামাজিক- রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করেন, এমন মানুষদের জন্য এটা যেন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সংকটের সময়েও নিরপেক্ষতার নামে ক্ষুণ্ন হচ্ছে জাতির অনেক বড় স্বার্থ।

আমার শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম শহীদুজ্জামান সম্প্রতি এক টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি সরকারের দমন-পীড়নের কারণেই সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না, এটা সরকারের কথিত নিপীড়নের জবাব। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, বিএনপি কিছু দিক দিয়ে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে।

যে রাজনীতিক দেশের অর্থনীতির তোয়াক্কা করে না, শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না, তার হাতে দেশের ঝাণ্ডা ধরিয়ে দেওয়া যায় না।

খালেদা জিয়া নিজের কার্যালয়ে নিরাপদে বসে থাকেন। অপেক্ষা করেন মিরাকলের- কোনো না কোনো উপায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। এটা স্পষ্ট যে তিনি দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রপ্রেমী সেনাবাহিনীকে রাজনীতির মাঠে নামানোর চেষ্টা করছেন। তিনি চাইছেন যেন নিরপরাধ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে হলেও বোমা হামলার মতো সহিংসতা থামাতে এ দেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ ঘটে। দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে যথাসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত করার পর তিনি এখন পড়েছেন শিক্ষার পেছনে। এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের প্রতি তার বিন্দুমাত্র দয়া হচ্ছে না। যে রাজনীতিক দেশের অর্থনীতির তোয়াক্কা করে না, শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না, তার হাতে দেশের ঝাণ্ডা ধরিয়ে দেওয়া যায় না। বোমা হামলায় অন্তত ৬০ জন মানুষ মারা যাওয়ার পর সুশীল সমাজ এগিয়ে এসেছে, তারা নিরপেক্ষতার নামে খালেদা জিয়ার অপরাধ কেবল এড়িয়েই যাচ্ছেন না বরং তাকে সমর্থনই করছেন। তারা বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। কে বা কারা হামলা চালাচ্ছে তা তো প্রমাণিত। সুতরাং, জেনেবুঝেই গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষতার নামে তারা এই অবস্থান নিয়েছেন।

ড. আকবর আলি খান যখন টেলিভিশনে বলেন, আদালতই রায় দেবে কে বা কারা বোমা হামলা করছে, অপরাধ প্রমাণের আগে কোনো ব্যক্তি বা দলকে দোষারোপ করা যথাযথ নয়; এরপরও তাকে নিরপেক্ষ বলা যায়? তার মতো একজন মানুষের মুখে এ কথা শুনে আমি স্তম্ভিত।

সুশীল সমাজের একটি অংশ মনে করছেন, সরকার বিরোধী দলের দাবি মেনে নিলেই সংকট নিরসন সম্ভব। তারা বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। কে বা কারা হামলা চালাচ্ছে তা তো প্রমাণিত। সুতরাং, জেনেবুঝেই গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষতার নামে তারা এই অবস্থান নিয়েছেন। সুশীল সমাজের জানা থাকা উচিত, অস্থায়ী সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দিতে চেয়েছিলেন। নিজে খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। সেই ফোনের ফলাফল কী হয়েছিল তা আমরা জানি। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার পুত্রের মৃত্যুতে সান্ত্বনা জানাতেও গিয়েছিলেন, কিন্তু ফটক বন্ধ ছিল। প্রফেসর শহীদুজ্জামান স্বীকার করেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিএনপির জন্য ভুল ছিল।

সুশীল সমাজ কি মনে করেন এক নেতার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এক এক বছরের মাথায় আবারও নির্বাচন করলে সমস্যার সমাধান হবে? আবার নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগেরই জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে তারা কি আবারও নির্বাচন চাইবেন? তাদের তো দুটির মধ্যে একটিকেই বেছে নিতে হবে।

সজীব ওয়াজেদ জয় যথেষ্ট দৃশ্যমান কিন্তু তিনি তার নানার গড়ে যাওয়া দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবেন এমন কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ভেবে আনন্দিত হবো যে একজন শিক্ষিত ও অমায়িক নেতা পেলাম।

উল্টোদিকে আছেন তারেক রহমান, যিনি লন্ডনে বসে একের পর এক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, তার সম্পর্কে যেসব নিন্দা প্রচলিত আছে তা জেনেই বলছি, শুধু আমি না তার নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার আগে দেশের যে কোনো মানুষই দুবার করে ভাববে।

হরতাল ক্রমে দুর্বল হয়ে আসছে। অবরোধেরও আর বেশি বাকি নেই। আর এর পরই রাজনীতির নামে মানুষকে পুড়িয়ে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করা হবে এবং ভবিষ্যতে যেন রাজনীতির নামে এ ধরনের কাজ কেউ না করে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে প্রগতিশীল শক্তিকে সমর্থন জানানোর মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার সময় এসেছে। তবে মানুষ একটি পক্ষ খুব স্পষ্টভাবেই নিয়েছে। তা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব্ব থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা রাজনীতিকদের গায়ের জোরে নেওয়া কোনো অ্যাকশন দেখতে চাই না। আবার এটাও চাই না কোনো কর্তৃপক্ষ তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলুক। শেষ পর্যন্ত জয় হবে শান্তির, আর সেটাই চায় সোনার বাংলার মানুষেরা।

লেখক : সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার ও লন্ডন হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

 

সর্বশেষ খবর