শিরোনাম
বুধবার, ৪ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
মতামত

১৬ কোটি মানুষ সেই দিনটির খোঁজে!

মীর আবদুল আলীম

শান্তি দেখা মিলবে কবে? দেশের মানুষ এখন সে দিনটিরই অপেক্ষায়। বর্তমান রাজনীতিতে গণতন্ত্রের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। স্বস্বার্থ আর দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে আসতে পারছেন না আমাদের নেতা-নেত্রীরা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরমতসহিষ্ণু নেতৃত্বের বড়ই অভাব। তাই তো আমরা লক্ষ করি যে কোনো ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল 'হ্যাঁ' বললে বিরোধী দলের উত্তর হয় 'না' এবং বিরোধী দল 'হ্যাঁ' বললে ক্ষমতাসীন দলের উত্তর হয় 'না'। আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাদের প্রধান দুই দলের নেতারা একে অপরের চেহারা দেখতে অপছন্দ করেন।

প্রশ্নটা রাজনীতিবিদদেরই করছি। দেশের সব সচেতন মানুষ আর বিজ্ঞজনদের উদ্দেশ্য, যারা দেশ নিয়ে ভাবেন প্রশ্নটা তাদের জন্যও। কথিত গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচের ঘূর্ণনে আর কতকাল ঘুরব আমরা? জানি এ প্রশ্ন করে কোনো লাভ নেই। ক্ষমতালোভী কথিত রাজনীতিকদের সবাই বধির। সাধারণ মানুষের আহাজারি ওদের কর্ণকুহরে কখনো পৌঁছায় না। শোধরাতে হলে জনগণকেই শোধরাতে হবে। কিছু একটা করতে চাইলে জনগণকেই তা করতে হবে। তথাকথিত ধজাধারী রাজনীতিকদের এসব জনগণের দুঃখ, দুর্ভোগ, দুর্দশা চোখে পড়বে না। চোখে তো ওদের কালো চশমা অাঁটা, দেখবে কী করে? সহিংসতার চাদরে গা মুড়িয়ে কতকাল বাঁচা যায়? আমাদের রাজনীতিবিদরা যারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্রেফ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। মাটির ঘর, টিনশেড চৌচালাকে অট্টালিকা বানাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের আমেরিকা ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। আপনারা আখের বেশ তো গোছাচ্ছেন? তবে আমার এ অভিযোগ ঢালাওভাবে নয়। দেশপ্রেমিক নেতাও বহু আছেন দেশে। তবে তারা বেশিদূর এগুতে পারেন না। মন্দের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই হন পিষ্ট। কেন আজ এদেশ জ্বলছে? কে পুড়িয়ে মারল আড়াই বছরের শিশু সাফিরকে? কে জ্বালিয়ে দিল সংসারের আয়ের একমাত্র উৎস নইমুদ্দিন ব্যাপারীর একমাত্র লেগুনা গাড়িটি? কারা গুলি করল নিরীহ পথচারীকে?, কে ভাঙল আলতাফের একমাত্র সম্বল দোকানটি? কারা ফেলছে এত লাশ! একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তো চলছেই। এসবের শেষ কোথায়? আমরা দেশবাসী এর শেষ দেখতে চাই।

বাংলাদেশের বহু সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো- রাজনৈতিক অন্ধ বিভাজন। যে যেই দলকে পছন্দ কিংবা সমর্থন করেন তিনি সেই দলের দোষত্রুটি দেখতে পান না বা দেখতে চান না। এটা আমাদের জনগণের মস্ত ব্যামো। এটা একটা বড় সমস্যা। আর তা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সমস্যা এখানেই যে, আমরা জাতীয় কোনো সমস্যাতেও জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। এ কেমন রাজনীতি? কাদের কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা? আমরা যারা জনগণ তাদের রাজনৈতিক অন্ধত্ব পরিহার করে রাজনৈতিক সচেতন হওয়া এখন খুবই জরুরি। ভালোকে ভালো, আর মন্দকে মন্দ বলার সাহস সঞ্চয় করা দরকার, আমাদের সবাইকে লড়াই করতে হবে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের এ লড়াই চলবে যতদিন না আমরা ফিরে পাই বঙ্গবন্ধু, ভাসানী আর শহীদ জিয়ার সোনার বাংলাদেশ। সত্যিই খুব হতাশা ঘিরে আছে আমাদের চারদিকে। এ জাতির কোনো আশার আলো নেই এখন। জানি আলো আসবে; আলো ফিরে আসবেই! একদিন সমগ্র জাতি জাগ্রত হবে, জাতি প্রতিবাদী হবেই একদিন। দেশের মানুষ ভুল বুঝতে শিখবে; দলীয় দাসত্ব ত্যাগ করে বেশি বেশি ভালো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে, মন্দকে মন্দ বলবে, অসৎকে না বলবে, সেদিনই দেশে নতুন সূর্য উদয় হবে। সেই সূর্যের অপেক্ষায় রইলাম আমি। দেশের অসহায় ১৬ কোটি জনতাও হয়তো সেই দিনটিকেই খুঁজছে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

ই-এমইল[email protected]

 

সর্বশেষ খবর