বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
রৌদ্র ছায়ার নিচে

আকাশে অশান্তির নীড়

মাকিদ হায়দার

আকাশে অশান্তির নীড়

আমেরিকার রাইট ব্রাদার্সরা যদি কোনোদিন জানতে পারতেন, পৃথিবীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হবে, তাহলে ওই দুই ভাই এরোপ্লেন বা উড়োজাহাজ আবিষ্কার করতেন কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বড়ভাই উইলবারের জন্ম ১৬/৪/১৮৬৭ মৃত্যু ৩০/৫/১৯১২ ছোটভাই অরভিলের জন্ম ১৯/৮/১৮৭১, মৃত্যু ৩০/১/১৯৪৮। ছোটভাই অরভিলের মৃত্যুর মাত্র ৫ মাস আগেই ভারতবর্ষকে ব্রিটিশরা দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন, ওই রাইট ব্রাদার্সদের আবিষ্কৃত উড়োজাহাজ দিয়ে আমেরিকানরা বোমা ফেলে মেরেছিল কয়েক লাখ লোক। জাপানের হিরোসিমা আর নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালের জুলাই/আগস্ট মাসে। ছোটভাই অরভিল, নিরীহ হিরোসিমা আর নাগাসাকির হাজার হাজার লোকের অকাল প্রয়াণে ব্যথিত হয়েছিলেন, যেমন ব্যথিত হয়েছিলেন সেই উড়োজাহাজের সারথী/পাইলট, দুটি সম্পন্ন শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেখে। অপরদিকে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে খণ্ড খণ্ড করেই স্থির থাকেননি, ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমানের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টিসহ হিন্দু আর মুসলমানদের নিয়ে ফুটবলের মতো খেলতে দ্বিধাবোধ করেননি, যেমন ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি খেলেছিল এশিয়ার জাপানে। অপরপক্ষে ছিলেন হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং তাদেরই দোসর জাপানিরা। জার্মানসহ কয়েকটি দেশ, ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে, এমনকি বার্মাতেও, ফিলিপাইন্সেও বোমা ফেলতে দ্বিধাবোধ করেননি, আকাশ থেকে যে উড়োজাহাজটিতে চড়ে যারা ওইসব হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন আমার অভিধায় ওইসব হত্যাকাণ্ডের দায়ভার আমেরিকার জগৎবিখ্যাত উইলবার এবং তারই অনুজ অরভিলকেই দায়ী করা যায়। পৃথিবীবিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এবং চীনের পরিব্রাজক হিউয়েন চেন তৎকালীন ভারতবর্ষের যেসব বর্ণনা তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে লিখে গেছেন, সেখানে আমরা দেখতে পাই শান্তির দেশ এবং সুখের দেশ ভারতবর্ষ। কূটকৌশলে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের তাড়ালেন এবং নামালেন তাদের রাজ্যপাঠ থেকে আরেক দল সুবিধাবাদী ভারতীয়দের দিয়েই।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুনের পর থেকে মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে। সেই রাজদণ্ডের অবসান ঘটল ১৯০ বছর পরে। মাঝখানে ১৮৫৭ সালে ঘটে গেল সিপাহি বিদ্রোহ। তারপরেও ৯০ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপের একদিন অবসান হলো। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে, বাংলাকে ভাগ করে ছাড়লেন ব্রিটিশ বাহাদুরেরা। তবে ভাগ সম্পূর্ণ না করেই পাততাড়ি গুটিয়ে পাড়ি দিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের দল ব্রিটেনের দিকে। ভাগ করলেন না ভারতের এবং তৎকালীন পাকিস্তানের ছিটমহল, কিংবা বলা যেতে পারে কাশ্মীর। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনেরা দিল্লি, কলকাতার বিমানবন্দর থেকে তাদের স্বদেশে ফিরতে পেরেছিলেন রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের আবিষ্কৃত উড়োজাহাজে।

১৯৪৭ সালের পর থেকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর লোকজন ছাড়াও তৎকালীন পিআইএ নামক [পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স] উড়োজাহাজে বাঙালিদের হত্যা করার জন্য শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কসাইরা এ দেশে এলো না, তাদের সঙ্গে নিয়ে এলো করাচি, রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদ থেকে একদল উচ্ছন্নে যাওয়া যুবকদের কালো কুচকুচে পাজামা-পাঞ্জাবি পরিয়ে, হাতে পিস্তল বা রিভলবার, চোখে সানগ্লাস তাদেরই নাম দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার মিলিশিয়া। উর্দু এবং পাঞ্জাবি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা তারা না জানলেও তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় হত্যা এবং অগি্নসংযোগের ক্ষেত্রে রাজাকার, আলবদরেরা এগিয়ে নিয়ে দেখিয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘর, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নাম-ঠিকানা দিতে একটুও ভুল করেনি, বাঙালি রাজাকার পুঙ্গবেরা। আমাদের পাবনা শহরের পূর্বের দিকে দোগাছি গ্রামটি ছিল সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের বেশ কয়েকজন জমিদার এবং জোতদারের বসবাস। ওই দোগাছির পূর্বদিকেই সুজানগর, পদ্মানদী পাড়ি দিলেই ফরিদপুরের রাজবাড়ী। ফরিদপুরের সেই রাজবাড়ী থেকে ১৯৭১ সালে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবার ভারত যাওয়ার বাসনায় রাতের অন্ধকারে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন দোগাছির জমিদারদের বাড়িতে। জমিদার কালীপদ বাবু এবং বনমালী বাবুরা দেশভাগের পরপরই পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। তবে কালীপদ বাবুর ছোট ভাই হরিপদ বাবু স্বদেশ ছেড়ে পরবাসী, উদ্বাস্তু হতে চাননি বলে থেকে গিয়েছিলেন [ছন্দনাম দিলাম বাবুদের] তার জন্মভূমিতেই, সহায়-সম্পদ যা কিছু ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল তার সম্মান। দোগাছি ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং মুসলিম লীগের নেতা আকবর আলী খানের কাছে যিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অসহনীয়। কেননা, গ্রাম্য সালিশ আচার-বিচারের জন্য স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান প্রায় সবাই শরণাপন্ন হতেন হরিপদ বাবুর কাছে। দোগাছি ইউনিয়নের উত্তর দিকেই হরিতলা গ্রামটি পদ্মানদীর খুব কাছে হলেও লোকজন বর্ষাকালে শুধু নৌকা ব্যবহার করতেন, সেই হরিতলা গ্রাম সংলগ্ন বিখ্যাত একটি মসজিদ 'ভারারা মসজিদ', সেই মসজিদেরই পুবের দিকে ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, দানেশ মণ্ডল। দানেশ মণ্ডল ছিলেন বালু ব্যবসায়ী এবং পাবনা শহরের ছিলামপুর মহল্লায় তার আপন কাকা সিরাজউদ্দিন মণ্ডল, সপরিবারে ১৯৭১ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে উঠেছিলেন তারই পৈতৃক বাড়ি হরিতলায়। দানেশ মণ্ডল ছিলেন সিরাজ মণ্ডলের বড় ভাইয়ের ছেলে, দানেশ মণ্ডলের বালুবাহী নৌকাতেই অনেক মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক সেজে চলে আসত চর আসুতোষপুর থেকে, এসে খোঁজ নিত, মুসলিম লীগের নেতা এবং দোগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলীর ইন্ধনে কত হিন্দু পরিবার মারা গেছে, রাতের অাঁধারে ভেসে গেছে সেপ্টেম্বরের বা ভাদ্র-আশ্বিনের পদ্মানদীতে।

আকবর আলী খানের বিশেষ বন্ধু, চর তারাপুরের ওসমান গনি খান এবং চাটমোহরের সোনাই মল্লিক ডাকাতের ছেলে সাবান মল্লিক এবং পাবনা শহরের জামায়াতে ইসলামীর আমির মৌলানা আবদুস সোবহানসহ রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তান আর্মির জিপ প্রায়শই যাতায়াত করত ওই দৌগাছি, হরিতলার কুলনে, সুজানগরের চরপাড়া এলাকায়। যেদিন ওইসব জিপে মিলিশিয়া, রাজাকার, আলবদর, পাক আর্মিরা যেতেন, সেদিনই দেখতাম গ্রামগঞ্জগুলোতে আগুনের লেলিহান। পাক আর্মির জিপে থাকতেন মৌলানা আবদুস ছোবহান, ওসমান গনি খান এবং সাবান মল্লিক। হরিতলার রাজাকার শিরোমণি মোসলেম উদ্দিন গোপনে সংবাদ পেয়েছিল রাজবাড়ী থেকে একটি হিন্দু পরিবার রাতের অন্ধকারে যুবক, যুবতীসহ আশ্রয় নিয়েছে হরিপদ বাবুর বাড়িতে। রাজবাড়ীর ওই হিন্দু পরিবারটি ভারতে যাওয়ার মানসে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছিলেন হরিপদ বাবুর বাড়িতে। ওই বাড়ি থেকে পদ্মা নদীর পূর্বপাড় বেশি দূরে নয়। পদ্মার ওপাড়ে কুষ্টিয়া পাড়ি দিতে পারলেই পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো বর্ডারে পৌঁছানো সম্ভব ভেবেই রাজবাড়ীর পরিবারটি রাতের অাঁধারে এসে উঠেছিলেন। শেষ রক্ষা হয়নি। পরদিন [২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ১৯৭১, ১১ আশ্বিন ১৩৭৮] পাকবাহিনী তাদের দোসরদের সঙ্গে নিয়ে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে এবং ওই জমিদার বাড়িতে আশ্রিত পুরুষদের লাশ বানিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছিল পদ্মা নদীতে। যুবতীদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকি-বদমাইশরা।

ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের তৃতীয় সপ্তাহে, মুক্তিবাহিনীর রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবি ইসলাম, ইকবাল হোসেন এবং এম এ করিমের সহযোদ্ধারা সেই আকবর, ওসমান এবং সাবান মল্লিককে চিরনিদ্রার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল, তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দানেশ মণ্ডলকে পাবনার বড় বাজার থেকে রাজাকাররা পাক আর্মির হাতে তুলে দিয়েছিল সেই মোসলেম আলীর সহায়তায়। দানেশ মণ্ডলকে দিনকয়েক পরে মৃতাবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল পাবনা শহরের নতুন ব্রিজের নিচে ইছামতি নদীর কচুরিপানার নিচে। শিয়াল-কুকুরের আহার হয়েছিল দানেশ মণ্ডল।

পাবনা শহরের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন জায়েদী। ১৯৫১-৫২ সাল থেকে তিনি পাকিস্তান গোয়েন্দা বিভাগের ক্যাপ্টেন হলেও পাবনা শহরবাসী কোনোদিন বুঝতে পারেননি ক্যাপ্টেন জায়েদীর গোপন কর্মকাণ্ড। এমনকি পাবনায় থাকাকালীন অবস্থায় শহরের জামতলা মহল্লার হাকিম উদ্দিন উকিলের স্কুলপড়ুয়া সখিনা বেগমকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন। যদিও ক্যাপ্টেন জায়েদীর পূর্বের স্ত্রী ছেলে মেয়ে থাকতেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব শহরে। সেই ক্যাপ্টেন জায়েদী এবং জনাকয়েক পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন, মেজর, পিআইএতে পালিয়ে গেলেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে করাচিতে। ঢাকা, করাচি পিআইএর ভাড়া ছিল মাত্র ২৫০ টাকা। পাবনা শহরের মুসলিম লীগের নেতাদের সহায়তায় মাড়োয়ারী ও হিন্দুদের টাকা পয়সা, সোনা-গহনা লুটপাট করেই রাতের অাঁধারে পালাতে পেরেছিলেন রাইট ব্রাদার্সদের উড়োজাহাজে। অপরদিকে মৌলানা ইসহাক [নেজামে ইসলামী], মৌলানা আবদুস সোবহান, [জামায়াতে ইসলামী] সহ আরও অনেকে আত্দগোপনে ছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগের রাত অব্দি। তাদের কপালে রাইট ব্রাদার্সের অ্যারোপ্লেন বা উড়োজাহাজ জোটেনি।

এ বছরের ১৯ জানুয়ারি সোমবার আমি এবং আমার এক বন্ধু [নুুুরুল ইসলাম, হেড মাস্টার। বাড়ি নেত্রকোনায় একটি সরকারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত] গিয়েছিলাম ওমরাহ হজ করতে সৌদি আরবের মক্কা এবং মদিনায়। আমাদের বাহক ছিল বাংলাদেশ বিমান। যার সারথী ছিলেন আলিশা। যাত্রী সংখ্যা ৪১৯ জন। যার অধিকাংশই সৌদিতে কর্মরত। বিমানের সারথী এবং ক্রুসহ হয়তো ১০-১২ জন ছিলেন সে দিনের সেই যাত্রায়। ৭ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ঢাকা থেকে জেদ্দা এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর ঘোষণা দিলেন একজন মহিলা ক্রু। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দুজনার সিট পেয়েছিলাম সেই জেট বিমানের লেজের দিকে। তার চেয়েও দুঃখের বিষয় হলো- ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীদের জন্য বসার যে ব্যবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স করেছে সেটি টঙ্গী আবদুল্লাপুরের মিনিবাসের চেয়েও খারাপ। ওই সিটে যে যাত্রীই বসুক না কন তার হাঁটু দুটি বেঁকে যাবে। স্পেস বলতে এক ইঞ্চি জায়গাও নেই, অথচ বাংলাদেশ বিমানের সেই গালভরা বিজ্ঞাপনের কথাটি মনে পড়ল 'আকাশে শান্তির নীড়'।

যারা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন, তারা নিতান্তই শ্রমিক শ্রেণির। তাদের দিকে তাকিয়ে মনে হলো বিমানের ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীদের প্রতি কেন এ অবিচার? এমন সময় বিমানের ক্রু ফাহমিদা পারভীন জয়ার সঙ্গে দেখা। জয়া একসময় 'আরণ্যক নাট্য গোষ্ঠীর' বিভিন্ন নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাকে একটু পেয়ে আশ্বস্ত হলাম, জয়া চা-বিস্কুটের জন্য যাকে বললেন তিনিও ওই আকাশের শান্তির নীড়ের আরেকজন ক্রু। তিনিও 'গণনাট্য কেন্দ্রের' নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন। ভাবলাম নাট্যকর্মীদের বাসস্থান হয়েছে আকাশে শান্তির নীড়ে। অথচ সারারাত জেগে সেবা দিতে হবে নীড়ের পাখিদের। শিল্প, সংস্কৃতি, ক্ষুধার রাজ্যে যে গদ্যময় হয়ে গেছে ভাবতেই কষ্ট হলো, মোহাম্মদ রেফাজউদ্দিন রিপন এবং ফাহমিদা পারভীন জয়া, দুজনাই ছিলেন নাট্যজগতের মানুষ। সেই শিল্প, নাট্যকলার, সবকিছুই বিলীন হয়েছে তাদের জীবনযুদ্ধে।

জানুয়ারির ২৭ তারিখ মঙ্গলবার দেশে ফিরলাম সেই আকাশে শান্তির নীড়ে। এবার ইকোনমি ক্লাসের প্রথমদিকে সিট পেলেও মনে হলো, টঙ্গী, গুলিস্তানের বাসেই উঠেছি। বাসে উঠলে কন্ডাক্টর বার বার ভাড়া চায়, তবে আকাশে শান্তির নীড়ের কোনো ক্রু ভাড়া চাইলেন না, উপরন্তু ওই দিনের ওই ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ এবং চিফ পার্সার ছিলেন একজন অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। যিনি একদিন ফুটবল, ক্রিকেট খেলতেন নিয়মিত নাজমুল হক বাবু। বাবুদের বাড়িঘর পুরান ঢাকার নবদ্বীপ বসাক লেনে, তিনি ঢাকার আদিবাসী বলতে গর্বর্বোধ করেন, তার মতো সহৃদয় ব্যক্তি এবং তার অন্য একজন ক্রু সোমা এবং সজল ওই তিনজনই যখন জানলেন আমি অমুক।

এমন সময় এয়ার প্রেশারে আমার কান দুটি ফেটে যাওয়ার অবস্থা হলে, সোমাকে বললাম, ইয়ার ফোন বা ওই জাতীয় একটা কিছু দিতে। লজ্জা পেয়ে সোমা জানালেন নেই, আছে তুলা। নামজুল হক বাবু, সজল অথবা সোমা হয়তো চেয়েছিল আকাশের শান্তির নীড়ে দুদণ্ড শান্তি দিতে। কেমন করে দেবে, তখন রাইট ব্রাদার্সের আবিষ্কৃত উড়োজাহাজটি ৩২০০০ ফুট উঁচু দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ৭০০ মাইল বেগে আসছিল ঢাকার দিকে। ফেরার দিনও ৪০০ অথবা কিছু বেশি যাত্রী নিয়ে আকাশে শান্তির নীড় উড়লেও বার বার মনে পড়ল এই শান্তির নীড়ের বাথরুমের ভিতর থেকে, ইকোনমি ক্লাসের সিটের নিচ থেকে ৩০০-৪০০ সোনার বার কিংবা দেড় মণ সোনা কীভাবে পাচার হয়ে এ দেশে আসে সেটি অবশ্যই রহস্য।

বিমানের ক্যাপ্টেন ক্রুরা কি জানেন, আকাশে শান্তির নীড়ের সুনাম, এখন দুর্নামে পরিণত হয়েছে। তাই বলছিলাম, রাইট ব্রাদার্সরা যদি জানতেন কোনো দিন উড়োজাহাজ নামক যন্ত্রটি আবিষ্কার করতেন না। যেহেতু ওই উড়োজাহাজে করেই ৯৩ হাজার পাকি পাড়ি দিয়েছিল ১৯৭৩-৭৫ সালে।

লেখক : কবি

 

 

সর্বশেষ খবর