রাজধানী ঢাকা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। একসময় রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ছিল খেলার মাঠ। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ অপদখলের শিকার। একসময় যেসব মাঠে ছিল ফুটবল নিয়ে শিশু-কিশোরদের অনুশীলন, যেসব মাঠে ঘোরাফেরা করে মুক্তবায়ু সেবনের সুযোগ পেত এলাকার মানুষ সেগুলো এখন অপদখলের শিকার। তার কোনোটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি স্থাপনা, কোনোটিতে মার্কেট। ২০০৩ সালে রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্ক বেদখলের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনজীবী সমিতি হাইকোর্টে একটি রিট করে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে রিট হয়। এই দুই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকার ৬৮টি খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য সংরক্ষিত জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে এসব খেলার মাঠ, খোলা জায়গা ও পার্কের সীমানা চিহ্নিত করতেও দেওয়া হয় নির্দেশ। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করার জন্য রাজউক ও ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুটি পৃথক রিটের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কিন্তু আদালতের সে আদেশ পালনে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতিই লক্ষ্য করা যায়নি। বরং পরবর্তী বছরগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ডিসিসির বিভিন্ন মাঠ ও মিনিপার্ক রিকশাভ্যানের গ্যারেজ এবং ট্রান্সপোর্টের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করা ও সাধারণ মানুষের মুক্তবায়ু সেবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির অভাবে। রাজধানীতে খেলার মাঠ না থাকায় কিশোর-তরুণরা মানসিক প্রতিবন্ধিকতার শিকার হচ্ছে। তাদের মন-মানসিকতায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ অবস্থার অবসানে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে। অপদখলকৃত সব মাঠ যাতে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যায় সে উদ্যোগও নেওয়া দরকার।