শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

কোরআন পাঠের ফজিলত

মাওলানা মাহমূদুল হাসান

কোরআন পাঠের ফজিলত

আমরা জানি, হজরত ওমর ফারুক (রা.) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য রওয়ানা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে বোনের কাছে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত শুনেছেন এবং অর্থটাও বুঝেছেন। ঘটনা বয়ান করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার বলার উদ্দেশ্য হলো, আবু জাহল নিজের হাতে যে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়, সেই কাজ আদায়ের জন্য সে ঘোষণা করল, যে ব্যক্তি মুহাম্মদকে হত্যা করতে পারবে, তাকে দুইশত উট পুরস্কার দেওয়া হবে (বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি টাকা)। কোনো কাফের নবীকে হত্যায় রাজি হয়নি। কিন্তু ওমর বললেন, আমি মুহাম্মদকে হত্যা করব। হত্যা করতে যাওয়ার পথে বোনের মুখে কোরআন শরিফের তেলাওয়াত শুনে তার দিলের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে খোলা তরবারি নিয়েই মুসলমান হওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। ওই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দারুল আরকামে ছিলেন। ওমর সরাসরি সেখানে গিয়ে দরজা নক করে বললেন, দরজা খোল। হজরত সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হুজুর! সর্বনাশ হয়ে গেছে! নবী বললেন কি হয়েছে? তারা বললেন, খোলা তরবারি নিয়ে ওমর এসে গেছে। হজরত হামজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন, হুজুর! আপনি শান্ত হয়ে বসুন, আমি দেখে আসি ওমর কী উদ্দেশ্যে এসেছে। সে যদি আপনার সঙ্গে বেয়াদবি করার উদ্দেশ্যে এসে থাকে, তাহলে আমার তরবারি তাকে ঠাণ্ডা করে দেবে। আর যদি সে ভালো নিয়তে এসে থাকে, তাহলে তার ভাগ্য ভালো। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত হামজা (রা.)কে লক্ষ্য করে বললেন, হামজা! আমি বুঝতে পেরেছি ওমর কেন এসেছে। তাই তুমি বস, আমি ওমরের সামনে যাচ্ছি। কারণ হলো, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগের দিন রাতে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি নবী, আমার সহযোগীর প্রয়োজন। সহযোগী তো অনেক আছে, কিন্তু ওমরকে সহযোগী বানালে ভালো হতো। এ জন্য আমি বলি, মুসলমানকে গালি দিতে নেই। কারণ, জানা তো নেই আল্লাহ্ পাক কাকে কখন ওমর ও আবু বকর হিসেবে গ্রহণ করে নেন। কোরআনে কারিমের পরশে এসে কট্টর লোকগুলো বড় বড় সাহাবি ও ইসলাম ধর্মের সৈনিকে পরিণত হয়েছেন। আমরা যদি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারি এবং এর গুরুত্ব বোঝাতে পারি, তবে সমাজে যারা কুফুরির নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা একদিন ইসলামের প্রাণ হয়ে যাবে। আমাদের দেশের যুবকদের জন্য ও দেশের নেতৃত্বের জন্য আল্লাহর দরবারে নতশির হয়ে, চোখের পানি ফেলে দোয়া করতে পারি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আদর্শ রেখে গেছেন যে, দেখ আমি নবী হয়েও ওমরের ওই সময়ের কর্মকাণ্ডের জন্য চোখের পানি ফেলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছি। তাই তোমরা যদি তোমাদের দেশের মুসলিম যুবকদের ব্যতিক্রম দেখ, তাহলে তোমরা তাদের গালি না দিয়ে, ঘৃণা না করে আল্লাহ্র দরবারে সেজদা করে চোখের পানি ফেলে তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করবে। আমরা কি তা করছি? আমরা আমাদের যুবকদের জন্য আল্লাহ্র দরবারে কাঁদি না। ঘটনাক্রমে যদি কখনো শবে বরাতে দোয়া করি তাহলে বলি, হে আল্লাহ্! আমার ছেলেটা যেন ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় পাস করে। কিন্তু এই দোয়া করি না যে, হে আল্লাহ্! আমার ছেলেকে তুমি আখেরাতের ব্যারিস্টার বানিয়ো। আল্লাহ্ পাক দুনিয়াতে মাধ্যম বানিয়ে কাজ করে থাকেন। আল্লাহ্ পাক হজরত ওমর ফারুক (রা.)কে মুসলমান বানিয়েছেন, মাধ্যম হলো- তার বোনের কোরআন তেলাওয়াত।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর