শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

পরকালের সফলতায় প্রতিযোগিতা কর

মুফতি আমজাদ হোসাইন

পরকালের সফলতায় প্রতিযোগিতা কর

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে- ২০ (হে মানব জাতি)! দুনিয়ার জীবনটা হলো খেলাধুলা ও ক্রীড়া-কৌতুকের মতো অস্থায়ী। ক্ষণিকের জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্বপ্রদর্শন, ধনবল ও জনবলের মোহ ছাড়া পার্থিব জীবন আর কিছু নয়। ক্ষণকাল পরেই যা হয়ে যায় শেষ। যেমন- সেই স্বচ্ছ ধারার বৃষ্টি! যার ফল পেয়ে কৃষক হয় আনন্দিত, চোখে তার সজীব চারাগাছের মনোহর দৃশ্য। কিন্তু স্বল্পকালমাত্র। হঠাৎই যেন সতেজ চারাগুলো শুকাতে থাকে! অতঃপর হয়ে যায় হলুদবর্ণের। অতঃপর খড়কুটো। কেবল দুনিয়ার কামাই এমনটাই হয়। আখেরাতে মিলে না শান্তি স্বস্তি। মিলে কেবলই যন্ত্রণা আর লাঞ্ছনা। সুতরাং তোমরা আখেরাত অর্জনে অগ্রগামী হও। অগ্রণী হও তোমাদের রবের মাগফিরাত আর সেই জান্নাত অর্জনে, যা আকাশ ও ভূমণ্ডলের মতো বিশাল প্রশস্ত, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহ ও তার রসুলে বিশ্বাসীদের জন্য। এ হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহাঅনুগ্রহ। তিনি যাকে চান তাকে দান করেন। তিনি মহা অনুগ্রহশীল। পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় ও বঞ্চনা নেমে আসে কখনো কখনো, আমি তো তা চূড়ান্ত করেছি সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই। আর এটা আমার জন্য খুবই সহজ বিষয়। এ বিপর্যয় এ কারণে, যাতে দুনিয়ার যা কিছু তোমরা হারাও তাতে মনক্ষুণ্ন না হও। আর যা কিছু তিনি তোমাদের দিয়েছেন তাতে অধিক উল্লসিত না হও। মনে রেখ! আল্লাহতায়ালা অহংকারীদের পছন্দ করেন না। যারা নিজেরা কার্পণ্য করে এবং অন্যদেরও কৃপণতায় উদ্বুদ্ধ করে, মূলতই যে বিমুখ থাকে তার জানা উচিত, নিশ্চয়ই মহান সত্তা আল্লাহ চিরধনী, সর্বোচ্চ প্রশংসিত। (সূরা হাদিদ: আয়াত: ২০-২৪)

আলোচ্য আয়াতসমূহে মহান রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভোগ বিলাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়েছেন। এক. দুনিয়া হলো ক্রীড়া-কৌতুকের মতো ক্ষণস্থায়ী দুই. ক্ষণিকের জন্য জাঁকজমকপূর্ণ তিন. ধনবল ও জনবল নিয়ে ক্ষণিকের বাহাদুরী। বস্তুত মানুষের জীবন তিন ভাগে বিভক্ত। এক. শৈশবকাল দুই. যৌবনকাল তিন. বার্ধক্যকাল। একজন শিশুর কাছে খেলনা অতি প্রিয়! কেউ যদি তার কাছ থেকে কোনো খেলনা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাহলে সে বড়ই কষ্ট পায়। এ শিশুটি বড় হওয়ার পর ছোটবেলার ক্রীড়া-কৌতুকের কথা মনে করে নিজে নিজেই হাসতে থাকে। আর বলতে থাকে ছোটবেলায় কতইনা অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করেছি। এখন সে যৌবন বয়সে সাজসজ্জায় সময় ব্যয় করে কত ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে, নিজেকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার জন্য। প্রয়োজনে বিউটি পার্লারে গিয়ে নিজের রূপ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে। এক সময় এই যুবক যখন বার্ধক্যে উপনীত হবে তখন তার কাছে যৌবনকালের সাজসজ্জা অসার মনে হবে। এখন সে শুধু ধন-সম্পদ বাড়ানোর ফিকিরে সারাক্ষণ মত্ত থাকে। একে অপরের কাছে ধন-সম্পদ ও জনবল নিয়ে বাহাদুরী করতে থাকে। বলতে থাকে অমুক থেকে কী আমি কোনো অংশে কম নাকি? তার কী আছে? আমার তিনটা বাড়ি আছে, অমুক জায়গায় তিন বিঘা জমি আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বাহাদুরী আর বড়াই করতে থাকে। মহান রাব্বুল আলামিন এ ধরনের ব্যক্তিকে সতর্ক করে বলছেন- হে বান্দা তোমার কাছে ক্রীড়া-কৌতুক, সাজসজ্জা এক সময় অসার ও বেহুদা মনে হয়। তাহলে এর পেছনে না পড়ে আখেরাতের কামাইর পেছনে সময় ব্যয় কর। মৌলিকভাবে দুনিয়ার ক্ষমতা, ধন-দৌলত, জনবল যদি সঠিক পথে ব্যয় না করা হয় তাহলে কোনোটাই বান্দাকে পরকালে সুখ-শান্তি দিতে পারবে না। সুখ-শান্তি তো একমাত্র আল্লাহপাকের হুকুম-আহকাম পালনের মধ্যে। আল্লাহপাকের হুকুম-আহকাম পালন করতে যদি কখনো বালা-মসিবত আসে তার বিনিময় আল্লাহতায়ালা পরকালে পরিপূর্ণ দিবেন। এর সমর্থনে অসংখ্য রেওয়াত এসেছে। যেমন- হজরত আবু সাঈদ খুদরী ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- কোনো মুসলিম (নর ও নারী) যখনই কোনো ক্লান্তি রোগ, পেরেশানি বা কষ্টে ভোগে, এমনকি একটি কাঁটা ফোটার যাতনাও সে ভোগ করে, এর বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। (বুখারি শরিফ) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : কোনো ইমানদার বান্দা অথবা বান্দীর ওপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যখন কোনো বিপদাপদ বালা মসিবত আসে, যেমন : কখনো তার জানের ওপর, কখনো তার সন্তান-সন্ততির ওপর, কখনো তার সম্পদের ওপর বিপদ দেখা দেয় (আর সে ধৈর্য ধারণ করে), এর দ্বারা তার গুনাহ খাতা ঝরে যেতে থাকে। অবশেষে যখন তার মৃত্যু হয় তখন সে গুনাহমুক্ত (নিষ্পাপ) অবস্থায় তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। (তিরমিজি শরিফ)।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদানিয়া, বারিধারা, ঢাকা

 

 

সর্বশেষ খবর