শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে নকল ভেজাল

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইসলামের দৃষ্টিতে নকল ভেজাল

ভেজাল একটি বহুল প্রচলিত বাংলা শব্দ। ভেজাল বলতে নিকৃষ্ট পদার্থ মিশ্রিত, কৃত্রিম কোনো কিছু বুঝায়। সংবিধান অনুযায়ী খাদ্যগ্রহণের নিশ্চয়তা লাভ করা আমাদের একটি মৌলিক অধিকার। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য প্রায়াজন তেমনি সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভেজালবিহীন খাদ্য অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে ভেজাল পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ভেজাল সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং অবৈধ। পণ্যদ্রব্যের ভেজাল প্রবণতার ফলে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য অস্বাস্থ্যকর ও বিভিন্ন রোগের নিয়মিত শক্তিরূপে পরিণত হয়। খাবার থেকেই যেমন মানুষের রক্ত তৈরি হয় তেমনি তা থেকেই রোগের উৎপত্তি ঘটতে পারে। ফলে এর বিষাক্ত ছোবলে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কোরআন মাজিদে এ ধরনের গুপ্তহত্যাকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, 'এ কারণেই বনি ইসরাইলের প্রতি এ বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা দুনিয়ার ধ্বংসাত্দক কর্ম করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল।' (সূরা মায়েদা, আয়াত-৩২)। খাদ্য ও পণ্যে ভেজাল দেওয়ার ফলে শুধু যে ভেজালদানের কাজে জড়িত ব্যক্তি অপরের ক্ষতিতে সচেষ্ট হয় তা-ই নয়, বরং সে নিজেও অন্যের ছোবলে আচ্ছাদিত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কেননা সে তো এ সমাজেরই একজন সদস্য। মহান আল্লাহ এমন কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কোরআন মাজিদে উল্লেখ আছে, 'তোমরা একে অপরকে হত্যা কর না।' (সূরা নিসা -২৯)। এ ছাড়া এ মর্মে হাদিসে এসেছে, 'নিজের কিংবা অন্যের ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না।' (ইবনে মাজাহ)। কোনো বিক্রেতার যদি তার পণ্যে ভেজাল মিশ্রণের প্রবণতা থাকে তাহলে সে পণ্যের মূল্য সাশ্রয় না করে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের ন্যায় তার মূল্য নির্ধারণ করে। এতে ক্রেতারা জুলুমের শিকার হয়। এ ছাড়া এ ধরনের লেনদেনে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির সম্ভাবনা থাকে। ফলে এটি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণের শামিল। মহান আল্লাহ এ মর্মে বলেছেন, 'হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না।' মহান আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিতে দুটি সত্তার মিলন ঘটিয়েছেন। একটি হলো নৈতিক সত্তা, অপরটি হলো পাশবিক সত্তা- যার উপস্থিতি মানুষকে পশুতে পরিণত করে। অপরদিকে নৈতিক সত্তা মানুষকে প্রকৃত মানবে পরিণত করে। খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যে ভেজালকারী নৈতিক গুণাবলি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। আত্দস্বার্থ চিন্তা, অর্থলিপ্সা ও নোংরা মনমানসিকতা মানুষের নৈতিকতাবোধ ও বিবেককে ধ্বংস করে দেয়। তার যাবতীয় চিন্তা-চেতনা মুনাফাখোরি, পুঁজিবাদী ও সুদের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যবস্থার আবর্তে ঘূর্ণায়মান থাকে। অধিক মুনাফা লাভের নেশায় নকল পণ্যদ্রব্য বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ। আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসুল (সা.) একদা একটি খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপটির মধ্যে তাঁর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তাতে তার হাত ভিজে গেল। রসুল (স.) বিক্রেতাকে বললেন, এটা কী হচ্ছে? সে বলল, এগুলোকে বৃষ্টিতে পেয়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কেন ভেজা অংশকে বাইরে রাখলে না, যাতে লোকেরা তা দেখে নিতে পারে। জেনে রেখ, যারা প্রতারণা করে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ- 'তোমরা বাতিল উপায়ে পরস্পরের ধন-সম্পদ ভক্ষণ কর না।'

লেখক : বিশিষ্ট মোফাচ্ছেরে কোরআন, খতিব : হাতিরপুল বায়তুল মোমিন জামে মসজিদ, ধানমন্ডি ঢাকা

[email protected]

 

সর্বশেষ খবর