শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর

তোফায়েল আহমেদ

নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর

১৯৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ৭ তারিখে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ইতিহাসের মহামানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে জাতির উদ্দেশে প্রদান করেছিলেন তার ঐতিহাসিক বক্তব্য। ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ কোটি কণ্ঠের সঙ্গে একাকার হয়ে যে মহিমান্বিত ঐকনিনাদ বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়, তাতে জাতিগত বঞ্চনার শিকার বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যক্ত হয়েছিল।

স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল '৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর। বিজয়ী দল সরকার গঠন করবে, শাসনতন্ত্র তৈরির জন্য অধিবেশনে মিলিত হবে এই ছিল জাতীয় অভিলাষ। কিন্তু জনমনে কাঙ্ক্ষিত এরকম একটি গণঅভিপ্রায়কে সমাধিস্থ করে ১ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে পূর্বঘোষিত ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন। মুহূর্তের মধ্যে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সারা দেশ। দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে চারদিকে। বিশেষ করে ঢাকার মানুষ ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শত-সহস্র মিছিলে জনসমুদ্রে পরিণত হয় পল্টন ময়দান। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিবাদ সভায় জনসাধারণকে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। আজকাল অনেকেই ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে এড়িয়ে নিজেকে বড় করে দেখাতে গিয়ে ইতিহাসকে বিকৃতি করে মননের দীনতা ও নীচতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন মিডিয়ায়। অথচ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের রক্তঝরা প্রতিটি দিনের কর্মসূচি নির্ধারণ হতো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্র নেতৃবৃন্দকে ডেকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। নেতার নির্দেশ পেয়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন এক বৈঠকে বিকালে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর সমন্বয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। একমাত্র ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দই সব ধরনের ঝুঁকির মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়। ২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয় এবং তার নির্দেশে কলাভবনে অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পল্টনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। ৪ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। ৩ ও ৪ মার্চ এ দুই দিনে চট্টগ্রামে ১২০ জন নিহত ও ৩৩৫ জন আহত হয়। খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ছয়জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়। ৫ মার্চ টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে চারজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। খুলনা ও রাজশাহীতেও যথাক্রমে দুজন ও একজন নিহত হয়। ৬ মার্চ ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বাত্দক হরতাল পালিত হয়। এদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে ৩৪১ জন কারাবন্দী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে সাতজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।

সংগ্রামী বাংলা সেদিন ছিল অগ্নিগর্ভ, দুর্বিনীত। কারও চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় প্রভুত্ব মেনে নেওয়ার জন্য, কারও কলোনি বা করদরাজ্য হিসেবে থাকার জন্য বাংলার মানুষের জন্ম হয়নি। বাংলার অপরাজেয় গণশক্তি সেদিন সার্বিক জাতীয় মুক্তি অর্জনের ইস্পাতকঠিন শপথের দীপ্তিতে ভাস্বর প্রিয় নেতাকে দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর ভেঙে ফেলার নির্দেশ প্রদান করে উচ্চকিত হয়েছিল এই স্লোগানে, 'তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব', 'বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে', 'তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি', 'তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'স্বাধীন করো স্বাধীন করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো'। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান আবহমান বাংলার বাসন্তী সূর্য আর উদার আকাশকে সাক্ষী রেখে নির্ভীক নেতা এবং বীর বাঙালির কণ্ঠ একই সুরে বেঁধে দিয়েছিল। সবার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ মন্ত্র- 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। দিগন্ত কাঁপিয়ে নিযুত কণ্ঠে ধ্বনি ওঠে 'জয় বাংলা'। দিনটি ছিল রবিবার। সকাল থেকেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম। পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী দুপুর ২টায় সভা শুরু হওয়ার কথা। জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দসহ আমাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করে বঙ্গবন্ধু জনসভার উদ্দেশে যাত্রা করেন। রাজ্জাক ভাই, সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফা, মণি ভাই, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, সিরাজুল আলম খানসহ আমরা একটি গাড়িতে রওয়ানা করি। নিরাপত্তার জন্য রাজ্জাক ভাই ও গাজী গোলাম মোস্তফা ড্রাইভারকে ৩২ নম্বর সড়কের পশ্চিম দিক দিয়ে যেতে বলেন। রেসকোর্স ময়দানে তখন মুক্তিকামী মানুষের ঢল। আকারের বিশালত্ব, অভিনবত্বের অনন্য মহিমা, আর সংগ্রামী চেতনার অতুল বৈভবে এই গণমহাসমুদ্র ছিল নজিরবিহীন। চারদিকে লাখো মানুষের গগনবিদারী কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে 'জয় বাংলা'। কার্যত ১৯৬৯ থেকেই 'জয় বাংলা' স্লোগানটি ছিল বাঙালির রণধ্বনি। বীর বাঙালির হাতে বাঁশের লাঠি এবং কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান যেন প্রলয় রাত্রির বিদ্রোহী বঙ্গোপসাগরের সঘন গর্জন।

রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের মহাসমাবেশ ঘটেছিল সার্বিক জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে পথনির্দেশ লাভের জন্য। আমরা যারা সেদিনের সেই জনসভার সংগঠক ছিলাম, যারা আমরা মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পদতলের পাশে বসে ময়দানে উপস্থিত পুরনারী, অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কচি-কিশোর, তরুণ-যুবক, কৃষক-শ্রমিক জনতার চোখে-মুখে প্রতিবাদের-প্রতিরোধের যে অগ্নিশিখা দেখেছি তা আজও স্মৃতিপটে ভাস্বর হয়ে আছে। কিন্তু তারা ছিল শান্ত-সংযত। নেতার পরবর্তী নির্দেশ শোনার প্রতীক্ষায় তারা ছিল ব্যগ্র-ব্যাকুল এবং মন্ত্রমুগ্ধ। প্রবল উত্তেজনাময় এবং আবেগঘন মুহূর্ত ছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা শুরু করেন জনসমুদ্র যেন প্রশান্ত এক গাম্ভীর্য নিয়ে পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে ডুবে যায়। এত কোলাহল, এত মুহর্মুহু গর্জন নিমিষেই উধাও। আবার পরক্ষণেই সেই জনতাই সংগ্রামী শপথ ঘোষণায় উচ্চকিত হয়েছে মহাপ্রলয়ের উত্তাল জলধির মতো- যেন 'জনসমুদ্রে নেমেছে জোয়ার'। জোয়ার-ভাটার দেশ এই বাংলাদেশ, আশ্চর্য বাঙালির মন ও মানস।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা সভামঞ্চে এলাম ৩টা ১৫ মিনিটে। কিন্তু ঊর্মিমুখর জনতার মধ্যে অধৈর্যের কোনো লক্ষণ দেখিনি। নির্দিষ্ট সময়ের বহু আগেই অর্থাৎ সকাল থেকে জনতার স্রোত এসে মিলিত হতে থাকে রেসকোর্স ময়দানে। জনস্রোতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সভাস্থল। মানুষ গাছের ওপরে উঠে বসে নেতার বক্তৃতা শোনার জন্য। সেদিনের সেই গণমহাসমুদ্রে আগত মানুষের বয়স, পেশা, সামাজিক মর্যাদা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও শ্রেণিগত অবস্থানের যতই ফারাক থাকুক না কেন, সেই জনতার মধ্যে আশ্চর্য যে ঐকতান ছিল তা হচ্ছে, হাতে বাঁশের লাঠি, কণ্ঠের স্লোগান আর অন্তরের অন্তরতম কোণে লালিত জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবির পর কালো মুজিবকোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন, বাংলার বীর জনতা বজ্রনির্ঘোষে তুমুল করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাকে বীরোচিত অভিনন্দন জ্ঞাপন করে। তার চোখে-মুখে তখন সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী মানুষের সুযোগ্য সর্বাধিনায়কের দুর্লভ তেজোময় কাঠিন্য আর সংগ্রামী শপথের দীপ্তির মিথস্ক্রিয়ায় জ্যোতির্ময় অভিব্যক্তি খেলা করতে থাকে। আমরা হিমালয়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে শুনে যাচ্ছি তার সেই দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ। যে ভাষণকে বিশেষজ্ঞরা তুলনা করেন আব্রাহাম লিংকনের 'গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস'-এর সঙ্গে। অমন সাজানো-গোছানো নির্ভুল ছন্দোবদ্ধ, প্রাঞ্জল, উদ্দীপনাময় ভাষণটি তিনি রাখলেন। কী আস্থা তার প্রিয় স্বদেশের মানুষের প্রতি, তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে বললেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না!' এমনকি জীবনের চেয়েও প্রিয় তার মাতৃভূমির স্বাধীনতা তা-ই তিনি শোনালেন। এতটাই বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন যে, ভাষণে তিনি একদিকে স্বাধীনতার ডাক দিলেন, অন্যদিকে শাসকের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করার পাতানো ফাঁদেও পা দিলেন না। 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' যেমন বললেন; তেমনি চার শর্তের জালে ফেললেন শাসকের ষড়যন্ত্রের দাবার ঘুঁটি। বললেন- সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে; সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে; নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে; গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। রক্তের দাগ না মোছা পর্যন্ত অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার কথাটিও বললেন। ক্যান্টনমেন্টে তখন গুলিবর্ষণ বোমা হামলার প্রস্তুতি। কিন্তু নেতার বিচক্ষণতায় রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হলো।

রেসকোর্স ময়দানে প্রাণের টানে বাংলার মানুষ বার বার ছুটে আসে। এর আগেও এসেছিল '৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি। সেদিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসির মঞ্চ উপেক্ষা করে, বাঙালির মুক্তির জয়গান গেয়ে ৩৩ মাস কারাবন্দী থেকে এক অপূর্ব ধৈর্য ও নির্লিপ্ততার মধ্য দিয়ে তিনি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মোকাবিলা করেন। বাঙালি সেদিন তার মুক্তির জন্য রাজপথে স্লোগান তুলেছিল, 'শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মুজিব তোমায় মুক্ত করবো; শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মা-গো তোমায় মুক্ত করবো'। এবং তাকে মুক্ত করে মুক্তমানব শেখ মুজিবকে বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। এই সেই রেসকোর্স ময়দান যেখানে বাংলার মানুষ শুনেছে এক ইউনিট আর প্যারিটির মৃত্যুঘণ্টা; '৭০-এর ৭ জুনে শুনেছে ছয় দফার জয়নিনাদ; আর '৭১-এর ৩ জানুয়ারি শুনেছে ছয় দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অগ্নিশপথ। আর ৭ মার্চের রেসকোর্স বাংলার মানুষকে শুনিয়েছে স্বাধীনতার অমোঘ মন্ত্র। সেদিন রেসকোর্সে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে সম্বোধন করেছেন, 'ভায়েরা আমার'। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নির্যাতিত-মুমূর্ষু-বিক্ষুব্ধ চেতনাকে নিজ কণ্ঠে ধারণ করে নির্দেশ দিয়েছেন, '...প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।'

১ হাজার ১০৮টি শব্দসংবলিত প্রায় ১৮ মিনিটের এই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু যা নির্দেশ প্রদান করেছিলেন আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। বঙ্গবন্ধু যখন মুক্তিসংগ্রামের রূপরেখা আর চরম আত্দত্যাগের কথা ঘোষণা করছিলেন তখন তার কণ্ঠ কাঁপেনি, থামেনি- গণশক্তির বলে বলীয়ান গণনায়কের কণ্ঠ বজ্রের হুঙ্কারের মতোই গর্জে উঠেছিল। ইতিহাসের আশীর্বাদস্বরূপ- নেতা আর জনতার শিরদেশে যেন বসন্তের আকাশ থেকে বিদায়ী সূর্যের আলোকরশ্মি ঝরে পড়ছিল। ঐতিহাসিক সেই দুর্লভ ক্ষণটিতে আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল নেতার পদপ্রান্তে বসে- সাড়ে সাত কোটি বঞ্চিত-অবহেলিত-নিরন্ন নরনারীর অবিসংবাদিত নেতার অপরূপ রূপ প্রত্যক্ষ করার।

সর্বাত্দক মুক্তিসংগ্রামের অগ্নিশপথে ভাস্বর, যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত সভাস্থলের প্রতিটি নিরস্ত্র মানুষ সেদিন সশস্ত্র হয়ে ওঠে; তাদের চোখ-মুখ শত্রুর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আত্দত্যাগের অপার মহিমায় আলোকিত হয়। নেতার বক্তৃতার শেষাংশ 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' হৃদয়ে ধারণ করে সংগ্রামী জনতার দীপ্ত স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে তথা রাজনৈতিক সংগ্রামে জয়যুক্ত আমরা হয়েছি, আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা, একটি পতাকা ও জাতীয় সংগীত পেয়েছি। কিন্তু মুক্তিসংগ্রাম তথা অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে আমরা জয়যুক্ত হতে পারিনি। এখনো আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই ৭ মার্চের ভাষণের আবেদন এখনো অটুট, এখনো স্থায়ী জাতির মননে-হৃদয়ে-চেতনায়।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, বাণিজ্যমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী

বাংলাদেশ সরকার।

[email protected]

 

 

 

সর্বশেষ খবর