শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরকারি সংস্থার ঋণ

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের অঘোষিত নীতি হলো কোম্পানিকা মাল দরিয়ামে ঢাল। এই অঘোষিত নীতির কারণে দুনিয়ার সব দেশেই ব্যবসা ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বিরলই বটে। আর বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান আর লোকসান সমার্থক শব্দ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বহু বছর ধরে। অব্যবস্থাপনায় পারঙ্গম কোনো কোনো সরকারি সংস্থার জন্য লোকসান নিশ্চিত করেছেন অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ভর্তুকির সিদ্ধান্ত। সাধারণ মানুষের কল্যাণ বা জীবনমান উন্নয়নে ভর্তুকি দেওয়ার তত্ত্ব হাজির করা হলেও সেখানে থাকে শুভঙ্করের ফাঁকি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পেট্রল, ডিজেল, বিদ্যুৎ খাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তার সিংহভাগ সুফল ভোগ করে তেলা মাথার অধিকারীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আর ভর্তুকি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেও বিপাকে ফেলেছে। পাঁচটি সরকারি সংস্থার কাছে তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪৭ কোটি টাকা ইতিমধ্যে ঋণখেলাপিও হয়ে গেছে। সরকারি সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা আটকা পড়েছে সোনালী ব্যাংকে, যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর জনতা ব্যাংকে ৬ হাজার ৬১৮ কোটি, অগ্রণীতে ৩ হাজার ৩৩৩ কোটি, রূপালীর কাছে ৩ হাজার ৮১২ কোটি ও বেসিক ব্যাংকে ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী প্রদত্ত ঋণের বেশির ভাগই বকেয়া পড়েছে পেট্রলিয়াম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপিসির কাছে। এ সংস্থাটির কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পাওনার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ ঋণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দীর্ঘদিন বকেয়া থাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অর্থ বিনিয়োগের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এসব ঋণের বিপরীতে সময় সময় সরকারের পক্ষ থেকে কাগুজে বন্ড দেওয়া হলেও এর সুদের হার আমানতের সুদের হারের তুলনায় কম। বড় আকারের ঋণ দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরও তার কুপ্রভাব অনুভূত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থায় পড়ছে। এ অবস্থার অবসানে কৃষি ছাড়া অন্য কোনো খাতে ভর্তুকি যেমন বন্ধ করা দরকার তেমন লোকসানি প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর