শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্রয় দেয় না

মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী
(পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ)

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের আগে সারা বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের পাপ-পঙ্কিলতায় জড়িয়ে পড়েছিল। আরব সম্প্রদায় যত ধরনের পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল তার মধ্যে মারাত্দক ছিল সাম্প্রদায়িক বিরোধ ও শত্রুতা। গোত্রে গোত্রে ও সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে মারামারি, হানাহানি ছিল তখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই এসব অজ্ঞানতা ও জাহিলিয়াত দূর করার জন্য শান্তির বাণী নিয়ে প্রেরিত হলেন নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। প্রেরিত হলেন তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণের জন্য। ইরশাদ হয়েছে, 'আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি' (সুরা আহজাব : ১০৭)।

তাই রসুলুল্লাহ (সা.) গোত্র-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সব মানুষকে অত্যন্ত দরদভরা কণ্ঠে আহ্বান করেছেন সত্য ও ন্যায়ের দিকে, শান্তি ও কল্যাণের পথে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার জন্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য তিনি গ্রহণ করেছিলেন নানামুখী বাস্তব পদক্ষেপ। কথা ও কাজের মাধ্যমে তিনি সে পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রয়াসী হন। সব ধর্ম-মতের প্রবক্তা রসুলদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাদের সম্মান করে তিনি ঘোষণা করলেন, 'রসুল (মুহাম্মদ সা.) তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ইমান এনেছেন এবং মুমিনরাও। তাদের সবাই আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তার কিতাব ও তার রসুলগণে ইমান এনেছেন। তারা বলেন, আমরা তার রসুলদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না' (সুরা বাকারা : ২৮৫)।

ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ইলাহ তথা উপাস্যদের গালি দিতে তিনি নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : 'আল্লাহ ছেড়ে যাদের তারা ডাকে, তাদের তোমরা গালি দিও না। কারণ তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে বসবে' (সুরা আনআম : ১০৮)।

মূলত অন্য সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর প্রতি মহানবী (সা.) যে সহিষ্ণুতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছেন, বিশ্বের ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করা মুসলমানদের কর্তব্য বলে তিনি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, 'তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতো, তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতো এবং তাদের ইজ্জত-আব্রু আমাদের ইজ্জত-আব্রুর মতো হেফাজতযোগ্য'।

পরিশেষে বলতে হয়, রহমাতুলি্লল আলামিন রসুলে কারিম (সা.) বিশ্বসভ্যতা নির্মাণে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনে এবং দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ইতিহাসে তার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আসুন, আমরাও সেই শিক্ষা অনুসরণ করে সব ধর্মমতের লোকজন মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বসবাস করি।

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর