শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

মৃত্যুর কথা ভাবতে হবে

মাওলানা মাহ্‌মূদুল হাসান

মৃত্যুর কথা ভাবতে হবে

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন- কবর, হাশর, পুলসিরাত কেমন জিনিস। তিনি ছিলেন উম্মতের সবচেয়ে বড় দরদী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। নিজের চেয়ে উম্মতের মুক্তি কামনাই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় তপস্যা। উম্মতের শান্তির জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে অনেক আবেদন-নিবেদন করেছেন। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তাকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন। সে ঘটনাকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে কারীমের সূরা বনি ইসরাইলে এভাবে তুলে ধরেছেন- মেরাজের রাতে আল্লাহ্তায়ালা হজরত রসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবরের দৃশ্য দেখিয়েছেন এবং গোনাহগারদের যে গোনাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেখিয়েছেন। যেমন- সুদখোর, জিনাকার ও অন্যের সম্পদ হরণকারী প্রত্যেককে আলাদা আলাদা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর যারা নামাজ পড়ে, হজ করে, জাকাত প্রদান করে এবং মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে, তারা কেমন শান্তিতে আছেন, সেটাও দেখিয়েছেন। দেখানোর কারণ হলো- প্রিয় নবীজী উম্মতের সামনে জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করেন। আর নিজ চোখে দেখে বয়ান করা, শুনে বয়ান করার চেয়ে অধিক বিশ্বাসযোগ্য এবং তাতে উপস্থাপনাও ভালো হয়। তাই আল্লাহপাক নবীজীকে জান্নাত-জাহান্নাম ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন।

দুনিয়ার ধন-সম্পদ, দুনিয়ার সৌন্দর্য ও মোহ আমাদের গ্রাস করেছে। অস্থায়ী দুনিয়ার পেছনে আমরা আমাদের পূর্ণ জীবন ও যৌবন, শক্তি-সামর্থ্য সবাই ব্যয় করে যাচ্ছি। কিন্তু স্থায়ী জীবনের চিন্তাও করছি না। তাই নবীজী বলেছেন- কবর জিয়ারত কর, তাতে আখেরাতের কথা মনে হবে। কারণ, সেখানে তোমার পিতা-মাতা, বন্ধু-বান্ধব এবং অল্প বয়সের শিশুও শুয়ে আছে। ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাইকে একদিন অবশ্যই কবরে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়টি কারও জানা নেই। আল্লাহ্তায়ালা সূরা ইউনূসের ৪৯নং আয়াতে ইরশাদ করেন- 'যখন মৃত্যুর সময় এসে যাবে, তখন এক মুহূর্ত এদিক সেদিক করা যাবে না; সঙ্গে সঙ্গে চলে যেতে হবে।' সূরা নিসায় আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন- মৃত্যু কাউকে সংবাদ দিয়ে আসবে না যে, হে ব্যক্তি! তুমি সাবধান হয়ে যাও। মৃত্যু তোমার কাছে অমুক দিন এতটার সময় আসবে? না, এমনটি কখনো হবে না। ছোট-বড় ভালো-মন্দ, সুস্থ-অসুস্থের কোনো ভেদাভেদ নেই। তুমি যেখানেই থাক না কেন, সময় আসার সঙ্গে সঙ্গে তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তোমাকে চলেই যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অতএব, মৃত্যুকে স্মরণ কর। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চক্ষু বন্ধ করে মৃত্যুর মুরাকাবা করবে যে, আমি যেমন ভাই কিংবা চাচাকে অন্ধকার কবরে একা ফেলে এসেছি, আর সে আপনজনহীন হয়ে অন্ধকার কবরে এতিমের মতো শুয়ে আছে তেমনি আমাকেও একদিন তার মতো অন্ধকার কবরে অসহায়ের মতো পড়ে থাকতে হবে। নবীজী বলেছেন, 'মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর, তাহলে দুনিয়ার চাকচিক্য ও মরীচিকার আকর্ষণ মিটে যাবে।' প্রেমিক বাদশাহকে পীর সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, আমি আপনাকে আপনার মৃত্যুর তারিখ শোনানোর পর আপনার প্রেমের রোগ আছে কিনা? বাদশাহ বললেন- না, এখন তা নেই। সেই রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছি। পীর সাহেব বললেন, আপনার সেই রোগের ওষুধ হিসেবে আপনাকে আপনার মৃত্যুর তারিখ শুনিয়েছিলাম। এ ওষুধ দুনিয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রস্তুত করতে সক্ষম নয়। এ ওষুধ আবিষ্কার করেছেন হজরত রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দুনিয়ার ডাক্তার-বৈজ্ঞানিক সবাই মিলে পেটের চর্বি দূরীকরণের ওষুধ আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়ে তারা বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠে দৌড়াতে হবে। নামাজের খবর নেই, কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের সময় নেই। প্রত্যুষে সুস্থতার প্রত্যাশায় দৌড়াতে গেলে শত্রুর হাতে জীবন বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। হজরত রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'এসব চিকিৎসায় প্রকৃত সুস্থতা আসবে না। যাও, কবর জিয়ারত কর! আল্লাহর কথা স্মরণ হবে। তাহলে রোগমুক্ত, সুস্থ-সবল ও আনন্দের জীবন লাভ হবে।' এ শিক্ষা পৃথিবীর কোনো পাঠশালায় নেই। আছে শুধু কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতে।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর