শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

তদন্ত সম্পর্কে ইসলাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

তদন্ত সম্পর্কে ইসলাম

মহান আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা- 'আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন কর না। যে ব্যক্তি তা গোপন করে সে তার অন্তরকে পাপিষ্ঠ বানাল।' (সূরাহ্ বাকারা : ২৮৩ নং আয়াত)। আমরা প্রায়ই দেখি কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে। কিন্তু সে তদন্ত কমিশনের কাজ অনেক সময় কিছুদূর গিয়ে আটকে থাকে, আবার অনেক সময় রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। কিছু তদন্ত রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার পরও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অথচ তদন্তও একটি সাক্ষ্য। এ সাক্ষ্যের মাধ্যমে নির্ণীত দোষীদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত। মহান রাব্বুল আলামিন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন- 'হে ইমানদারগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে দৃঢ় থাক- যদিও তা তোমাদের অথবা তোমাদের সন্তানদের অথবা নিকট আত্দীয়দের বিপক্ষে যায়।' (সূরাহ নিসা : ১৩৫ নং আয়াত)। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, 'হে ইমানদারগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে দৃঢ় থাক। তোমাদের যেন অন্য কোনো পক্ষকে ঘায়েল করার মানসে ন্যায়বিচারে বাধা না দেয়। তোমরা ন্যায়বিচার কর, কেননা তা-ই তাকওয়ার সর্বাগ্রে (গণ্য) আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চই আল্লাহ সম্যকজ্ঞাত তোমরা যা কর সে ব্যাপারে।' (সূরাহ মায়িদাহ : আয়াত নং-০৮)।

এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে বিভিন্ন রাজ্য ও প্রদেশে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা, গভর্নরদের কিছু কিছু অদূরদর্শিতা, তাদের নামে বানোয়াট অপবাদ ও রটানো বদনামের পাল্লা যখন ভারি হচ্ছিল তখন কতিপয় সাহাবি হজরত উসমান (রা.)কে পরামর্শ দিলেন যে, প্রদেশসমূহে তদন্ত দল পাঠানো হোক। তারা সঠিক পরিস্থিতি অবগত হয়ে বাস্তব রিপোর্ট করলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। সে মতে মোহাম্মদ ইবনে মাসলামাকে কুফায়, উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) কে বসরায়, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কে সামে ও আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) মিশনে প্রেরণ করেন। তাদের নেতৃত্বে চলমান কমিশন যে রিপোর্ট পেশ করেন তা হজরত ইসমান (রা.) খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করেন। (বালাজুরি : ফুতুহুল বুলদান, ইবনে কাছির : বিদায়াহ ওয়া নিহায়াহ)।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, তদন্তের কোনো বিষয়ই যেন গোপন রাখা না হয়। কেননা, মহান আল্লাহ বলেন, 'আর তোমরা সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত কর না এবং জেনেশুনে সত্যকে গোপন কর না।' (সূরাহ বাকারা : ৪২নং আয়াত)। তদন্ত কমিশন গঠনের মধ্যেও সমস্যা থাকতে পারে। স্বজনপ্রীতি ও দলীয় অন্ধ আনুগত্যের কারণে কমিশনের সদস্য না করে যোগ্য, দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিশনই ইসলাম সমর্থন করে। কেননা, এটিও একটি আমানত। পবিত্র দায়িত্ব। আর আমানতের খেয়ানত (অবহেলা) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে 'আমানতের খেয়ানত করা মুনাফিকের লক্ষণ' (বুখারি শরিফ)। অপর একটি হাদিসে এসেছে, 'যখন অযোগ্য লোকদের কাছে আমানত (দায়িত্ব) প্রবর্তন করা হবে, তখন কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা কর।' (বুখারি শরিফ)।

আশা করি, ভবিষতে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠুু তদন্তের পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ। কারণ দেশ ও জনগণের জানমাল-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন

লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছেরে কোরআন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও খতিব : হাতিরপুল বায়তুল মোমিন জামে মসজিদ।

www.selimazadi.com

 

 

সর্বশেষ খবর