শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্নীতি করব না, করতে দেব না

একটা দেশ, একটা জাতি কতটা সভ্য, কতটা সংস্কৃতি সম্পন্ন এবং কতটা উন্নত তা পরিমাপের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে সে দেশের মানুষ কতটা দুর্নীতিমুক্ত তা জানা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হলে মানুষ তার প্রাপ্য ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারি, আধাসরকারি, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে যদি নৈতিকভাবে অধঃপতি ও দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার ও নিজের প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এমন অবস্থা সুস্থ ও সভ্য সমাজে প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের সমাজে এখন নীতির চেয়ে দুর্নীতির প্রসার বেশি এবং রমরমা। সভ্যতার ক্যান্সার এই দুর্নীতি মানুষের বিবেককে কুরে কুরে খাচ্ছে। সরকারি অফিসে দুর্নীতি, বেসরকারি অফিসে দুর্নীতি, ব্যবসায় দুর্নীতি, হাসপাতালে দুর্নীতি, শিক্ষায় দুর্নীতি। এমন কী বিচার ব্যবস্থার মতো পবিত্র বিভাগকেও আমরা দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হিমশিম খাচ্ছি। দেশে এখন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দলবাজি ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। নিম্ন শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এভাবে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যে যেভাবে পারি জাতিকে সবক্ষেত্রে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছি। এভাবেই সভ্যতা পরিমাপের মাপকাঠি বিবেকের পারদটাকে টেনে অধঃপতিত করতে দ্বিধা করছি না আমরা। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানের বিকাশ, নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি এবং জনগণের জীবনমানের উন্নতি কল্পে গৃহীত সব পরিকল্পনা, প্রকল্প ও কর্মসূচি সর্বোপরি সুকৃত মানুষের পবিত্র আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ঘুষ-দুর্নীতি মানুষকে সব সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়, চলতে পারে না। দেশে এখন দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০১৫ উদযাপিত হচ্ছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এ সপ্তাহ। চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সপ্তাহে মানুষকে নানাভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করার চেষ্টা করা হবে। দেশে দুর্নীতিবিরোধী আইন আছে। ২০০৪ সালে এই আইন দুর্নীতি দমন কমিশনকে দেশের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের দায়িত্ব দিয়েছে। কমিশন কাজও করছে। ইতিমধ্যে তারা জেলা, উপজেলা, নগর-মহানগর পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া দেশের প্রায় ২২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠন করা হয়েছে 'সততা সংঘ'। এই উদ্যোগের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে। এরপরও বলব, দুর্নীতি প্রতিরোধে এই সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এই সভ্যতার ক্যান্সার ব্যাধি থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন দেশের মালিক জনগণের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শপথ গ্রহণ। আসুন, এ জন্য আর বিলম্ব না করে এখনই শপথ নেই, কোনো কাজের জন্যই আমরা ঘুষ দেব না, ঘুষ নেব না। আসুন শপথ নেই, দুর্নীতি করব না, করতে দেবও না।

সর্বশেষ খবর