মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

গোখরা

বিষধর সাপ গোখরা। এ গোত্রের রাজগোখরা এবং শঙ্খিনী সাপও গোখরার মতো বিষধর। গোখরার দুটি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। একটির ফণায় থাকে চশমার মতো দুটি চক্র, খইয়া বা খড়মপায়া গোখরা। দ্বিতীয়টির ফণায় থাকে চশমার এক পাশের খোঁপের মতো একটি চক্র, আর সাধারণ মানুষের কাছে এটিই গোখরা হিসেবে বেশি পরিচিত। গোখরা উত্তেজিত হলে ওদের ঘাড়ের লম্বা হাড় স্ফীত হয়ে ওঠে, তাতে চমৎকার ফণাটি বিস্তৃত হয়। চশমার মতো চক্রধারী ফণায়  U এর মতো যে উজ্জ্বল কালো চিহ্ন থাকে তা ঘিরে রাখে একটি হালকা বাদামি রঙের রেখা। অন্য জাতের গোখরার চক্রধারী ফণায় থাকে বড় কালো ছোপ বা একটি ইংরেজি O-এর মতো বলয় আর সেটা ঘিরে থাকে আরেকটি হলুদ বা কমলা রঙের বেড়।

গোখরা দৈর্ঘ্যে হয় প্রায় ১.৫ মিটার। এরা নিশাচর, থাকে মানুষের বসতবাড়ির আশপাশে, চাষের জমি ও বনাঞ্চলে। খায় ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, ছোট পাখি, ব্যাঙসহ অন্যান্য উভচর জীব এবং কখনো কখনো মাছ। গোখরা ১০-২৫টি ডিম পাড়ে এবং প্রায় দুই মাস ধরে ডিম পাহারা দেয়। ডিমে তা দেয় না। সাধারণত ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

গোখরার বিষ সরাসরি স্নায়ুকে আক্রমণ করে, ফলে ফুসফুস অবশ এবং হৃৎপিণ্ড নিষ্ক্রিয় হয়।

রাজগোখরা : পৃথিবীর দীর্ঘতম বিষাক্ত সাপ রাজগোখরা। এদের দৈর্ঘ্য হয় ৫.৫ মিটার পর্যন্ত। অন্য প্রজাতির গোখরার ফণা থেকে রাজগোখরার ফণা অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও সে ফণাটি মানুষের মাথাসমান উঁচুতে তুলতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক এ সাপের গায়ের রং কালচে থেকে ফ্যাকাসে ধূসর, মাথায় ও ঘাড়ে অস্পষ্ট রেখা, কিন্তু বাচ্চা রাজগোখরার মাথা ও ঘাড়ে উজ্জ্বল রঙের ডোরা থাকে। বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলেই এদের সংখ্যা বেশি। বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে মাঝে মাঝে দেখা যায়।

রাজগোখরা সাধারণত দিবাচর। গাছ, বাঁশ, প্রাচীর ইত্যাদি বেয়ে ওঠা, সাঁতার কাটা ও মাটির ওপর দিয়ে দ্রুত চলাফেরায় খুবই পটু। এরা বিষধর ও বিষহীন দুই ধরনের সাপ খায়। সম্ভবত এ কারণেই সাপটি (অর্থাৎ সর্পভুক) গণভুক্ত করা হয়েছে। রাজগোখরা অন্যান্য সাপের তুলনায় ডিমের বেশি যত্ন নেয়।

যৌনমিলনের সময় পুরুষ ও স্ত্রী সাপ পরস্পরকে পেঁচিয়ে ধরে। মিলন শেষে স্ত্রী সাপ বনের মেঝে থেকে কুড়ানো পাতা ও আবর্জনা দিয়ে দোতলা বাসা বানায়। সেখানে প্রায় তিন ডজন ডিম পাড়ে ও পরে অতিরিক্ত আবর্জনা দিয়ে বাসা ঢেকে দেয়।

পরিশেষে স্ত্রী সাপ বাসার ছাদে অাঁটসাঁট হয়ে বসে এবং ডিম না ফোটা পর্যন্ত সরে না। ডিম ৭০ দিন বা তারও পরে ফোটে। প্রহরারত স্ত্রী সাপ শিকার করে না।

 

সর্বশেষ খবর