বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মানব সৃষ্টির রহস্য

ডা. আলমগীর মতি

মানব সৃষ্টির রহস্য

মানুষের ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের ধারণা পোষণ করা প্রাচীনকাল থেকেই। এরিস্টটল মনে করতেন মাসিকের রক্তের সঙ্গে পুরুষের বীর্যের মিলন হলে ভ্রূণ তৈরি হয়। অনেকে আবার মনে করতেন মানুষের ভ্রূণ কেবল পুরুষের বীর্য থেকে তৈরি হয়। এ দুটি ধারণা যে ভুল তা প্রমাণ করেন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী স্পিলিজার ১৭৭৫ সালে। ব্রাভি ১৮৮৮-১৯০৯ সালের মধ্যে প্রমাণ করেন ক্রোমোজম বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক করে। মরগান ১৯১২ সালে মানুষের ভ্রূণ তৈরিতে জীবের ভূমিকা প্রমাণ করেন। এটা বলা যায়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আঠারশ শতকের আগে ভ্রূণ তৈরি সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারেনি কিন্তু পবিত্র কোরআন ও মহানবী (সা.)-এর বাণীর মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ১৫শ বছর আগেই ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। 'নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে। আমি তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছি। এরপর আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। সূরা ইনসান (দাহর)

একদা এক ইহুদি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন রসুল (সা.) সাহাবীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় কোরাইশদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে ইহুদি; এই লোকটা নিজেকে নবী বলে দাবি করছে। ইহুদি বলল আমি তাকে এমন প্রশ্ন করব যা নবী ছাড়া অন্য কারও জানা নেই। সে রসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল; 'হে মুহাম্মদ, মানুষ কি থেকে তৈরি হয়েছে? হজরত মুহাম্মদ (সা.) বললেন, 'মানুষ পুরুষের তরল (বীর্য) এবং মহিলাদের পানি থেকে তৈরি। ইহুদি বলল- তোমার পূর্বের নবীরাও এ কথা বলেছে।' মুসনাদ

ভ্রূণ তৈরির ব্যাপারে কোরআনের ভাষ্য

কোরআন শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে, মানুষকে 'নুতফা' থেকে তৈরি করা হয়েছে। নুতফা শব্দের অর্থ খুব অল্প পরিমাণ পানি। এখানে নুতফা বলতে পুরুষের বীর্যের কথা বোঝানো হয়েছে। বীর্য হচ্ছে অল্প পরিমাণ পানি এবং লম্বা মাছের মতো অসংখ্য শুক্রাণুর সমষ্টি। 'যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন কাদা থেকে আর তার বংশধরদের সৃষ্টি করলেন এক তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস (ছুলাল) থেকে।' সূরা সিজদাহ (৭-৮)

বীর্য থেকে মানুষ তৈরি সম্বন্ধে আল্লাহ সুবহানাল্লাহিতায়ালা বলেছেন- 'সুতরাং মানুষ ভেবে দেখুক কি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তীব্র বেগে স্খলিত পানি থেকে।' সূরা ত্বারিক (৫-৬)

সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা যে পুরুষের ক্রোমোজমের ওপর নির্ভর করে, পবিত্র কোরআন শরিফে তা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে- 'আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় নর-নারী শুক্রকীট থেকে যখন তাকে বিন্যাস করা হয়।' সূরা আন নাযিম (৪৫-৪৬)

ডিম্বাণু : ফ্যালোপিয়ান টিউবে উর্বরা প্রাপ্তির পর নারীর ডিম্বাণু নেমে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়া এগ প্লান্টেশন বা ডিম্বাণু রোপণ কর্ম নামে পরিচিত। উর্বরা প্রাপ্ত ডিম্বাণু যে স্থানে অবস্থান করে অর্থাৎ ইউটেরাসকে কোরআনের ভাষায় রেহেম বলা হয়। গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু অবস্থানের মূল কারণ হলো যাতে ডিম্বাণু পুষ্টিলাভ করতে পারে। গর্ভাশয়ে যে ডিম্বাণু দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে এ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহতায়ালা

বলেছেন, 'পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আলাক থেকে।' (যা দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে) সূরা আলাক-১ ২ মাতৃজঠরে ভ্রূণের বৃদ্ধির বিশেষ বিশেষ পর্যায় সম্পর্কে কোরআনে যে বর্ণনা আছে তার সঙ্গে ভ্রূণের ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের হুবহু মিল রয়েছে। ভ্রূণ সম্বন্ধে কোরআনে বলা হয়েছে, 'বস্তুটি দৃঢ়ভাবে আটকানো।' এর পর কোরআন আমাদের আরও জানিয়ে দিচ্ছে, ভ্রূণ এমন একটি পর্যায় অতিক্রম করে যাকে বলা যেতে পারে চিউড ফ্লেশ বা 'চিবানো গোশতের মতো'। ভ্রূণের ২৪ থেকে ২৬তম দিনে এই পর্যায়ের শুরু হয়। কোরআনে এই পর্যায়কে 'মুদগা' বলা হয়েছে। মুদগা শব্দের অর্থ চর্বিত গোশতের মতো। এ সময় খালি চোখে বর্ধিত ভ্রূণকে দেখলে অবিকল চর্বিত মাংসের মতো মনে হবে।

লেখক : হারবাল গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর