বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

আত্মহত্যা একটি মারাত্মক গোনাহ

মুফতি মুতীউর রহমান

প্রেমে ব্যর্থতা, পরকীয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক অপমান ইত্যাদি কারণে মানুষ বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ইভটি জিংয়ের কারণেও মেয়েরা বিভিন্ন সময় আত্মহত্যা করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সাময়িক যন্ত্রণা-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ আত্মহত্যা করে। তারা মনে করে, আত্মহত্যার মাধ্যমে অসহ যন্ত্রণা ও অপমান থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু আসলেই কি তাতে মুক্তি পাওয়া যায়। মুমিন মুসলমান হিসেবে আমরা পরকালে বিশ্বাসী, কবর-হাশর, জান্নাত-জাহান্নামে আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি। নেক আমলের প্রতিদান ও গোনাহের শাস্তিতে আমরা অবশ্যই বিশ্বাসী। সুতরাং আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর পরপরই কবরে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পেতে হবে সেটা অবশ্যই মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাহলে মৃত্যুর মাধ্যমে পার্থিব যন্ত্রণা, বিপদ বা কষ্ট ও অপমান থেকে মুক্তি হয়তো মিলতে পারে কিন্তু পারলৌকিক মহাশাস্তি থেকে তো আর মুক্তি পাওয়া যায় না। আত্মহত্যাটাই একটা মারাত্মক কবিরা গুনাহ। উপরন্তু যেসব কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে তার অধিকাংশই ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ। সুতরাং আত্মহত্যাকারীকে উভয়বিধ কারণে পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) অনেক হাদিসেই আত্মহত্যার কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সে পাহাড় থেকে পড়তে থাকবে এবং সে জাহান্নামে দীর্ঘস্থায়ী হবে। যে বিষপাণে আত্মহত্যা করল জাহান্নামে তার হাতে বিষ থাকবে। তা থেকে সে পান করতে থাকবে। জাহান্নামে সে দীর্ঘস্থায়ী হবে। যে কোনো লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করলে জাহান্নামে সেই লৌহাস্ত্র তার হাতে থাকবে তা দ্বারা সে নিজ পেটে আঘাত করবে। সে জাহান্নামে দীর্ঘস্থায়ী হবে। (বুখারি ২/৮৬০, মুসলিম ১/৭২)

এমনি আরও বিভিন্ন হাদিসে আত্মহত্যার কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যা মুক্তি নয় বরং নিজেকে সাময়িক কষ্ট ও পেরেশানি থেকে আরও বড় কষ্ট আজাবের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এ জন্য যারা কোনো পরিস্থিতির শিকার হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আত্মহত্যার কঠিন শাস্তি ও ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জানতে হবে। যে কোনো দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে আলেম-উলামার শরণাপন্ন হতে হবে। সবরের শিক্ষা নিতে হবে। মানসিক প্রশান্তির জন্য আল্লাহর জিকির ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতে মগ্ন হতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, যে কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আত্মহত্যার শাস্তি তার চেয়ে শত সহস্র গুণ কষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক।

লেখক : খতিব, মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর