শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগ বিড়ম্বনা

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মিল্টন ও জাকারিয়া নামে দুজন নিহত হয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষকসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। মাত্র এক দিন আগে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগ নামের কলহপ্রিয় ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তপনার কারণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে বিপাকে পড়তে হলো। গত তিন মাস বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ এবং পেট্রলবোমা ও ককটেল নির্ভর রাজনীতি মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর পরিস্থিতি যখন সরকার ও সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে তখন দলের ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তপনা ক্ষমতাসীনদের জন্য আবারো বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ নামের ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব যাদের সহযোগী সংগঠন তাদের বিপদে ফেলার জন্য বিরোধী দলের কোনো দরকার নেই। দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের অবদান অবিস্মরণীয়। বলা হয়, ছাত্রলীগের ইতিহাস হলো বাংলাদেশের ইতিহাস। কিন্তু বর্তমানে যারা নিজেদের ছাত্রলীগ দাবি করে শিক্ষাঙ্গনে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে, তাদের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের প্রেতাত্মা বলাই শ্রেয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ছাত্রলীগ নামধারীরা সুকীর্তি নয়, দুষ্কর্মের প্রতীক বলেই বিবেচিত হচ্ছে তাদের অপকর্মের জন্য। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি তাদের অভ্যাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদের পর তারা নিজেরাই নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে। সরকারি দল ও সরকারের মুখে চুনকালি লাগাচ্ছে ছাত্রলীগ নামধারীদের দুর্বৃত্তপনা। নিজেদের স্বার্থেই সরকারি দল বা সরকারকে ভাবতে হবে তারা ছাত্রলীগপনার কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে কি না।

 

সর্বশেষ খবর