শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম

মুফতি মিজানুর রহমান

বর্তমান বিশ্বে বহু ধর্ম মত প্রচলিত রয়েছে, তন্মধ্যে ইসলামই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। এরশাদ হয়েছে, নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র দীন। যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের কাছে জ্ঞান আসার পর মতানৈক্য ঘটেছিল। আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করলে আল্লাহ তো হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। (৩:১৯)। তাই সেই ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিম জাতিই আল্লাহর কাছে প্রিয়। কেয়ামতের ময়দানে এই মুসলিম জাতিকেই তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত দান করা হবে। মুসলিম জাতি যাতে সে পুরস্কারের পাত্ররূপে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে সে জন্য তিনি নাজিল করেছেন কিছু বিধিবিধান। সে বিধিবিধানের অন্যতম হলো পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। মহান আল্লাহ সে সম্পর্ক গড়ার যেমন তাগিদ দিয়েছেন তেমনি কোথাও তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সংশোধন করে দেওয়ার জন্য অন্য মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিনদের পরস্পর ভাই আখ্যা দিয়ে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন : 'মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর আর আল্লাহকে ভয় কর- যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।' (হুজুরাত : ১০)

মুমিনদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়ে পরস্পর লড়াই-ঝগড়া শুরু হলে তা মীমাংসা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো পক্ষ সে ফয়সালা মানতে অস্বীকার করলে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শক্তি প্রয়োগ করে সে পক্ষকে বাধ্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরশাদ হয়েছে : 'মুমিনদের দুটি দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। আর তাদের একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে' (হুজুরাত:৯)। অপর পক্ষে শান্তিশৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য, সৌভ্রাতৃত্ব বিনষ্টকারী যে কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, 'হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে উপহাস না করে, কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অন্য কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেক না। ইমানের পর মন্দ নাম খুবই মন্দ। যারা তওবা না করে তারাই জালিম' (হুজুরাত:১১)। এই ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য হজরত রসুলে কারিম (সা.)ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, 'তোমরা পরস্পর হিংসা করবে না, বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একজন অন্যজনের পেছনে লাগবে না; একজন অন্যের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করবে না। আর আল্লাহর বান্দারা তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করবে না। তাকে অপদস্থ করবে না। তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না।' (বুখারি মুসলিম)

মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তার একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়ে রসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, 'তুমি মুমিনদের তাদের পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ কষ্ট অনুভব করে তখন এ জন্য সমস্ত দেহই অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে।' (বুখারি মুসলিম)

তাই আসুন আমরা পরস্পর বিবাদ-বিচ্ছেদ ভুলে গিয়ে ভাই ভাই হয়ে যাই এবং পরকালীন পুরস্কার লাভের জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর