মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

তিন সিটি নির্বাচনে জিতছে কারা?

বিভুরঞ্জন সরকার

তিন সিটি নির্বাচনে জিতছে কারা?

আজ ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকার দুই অংশেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় এবং তাকে কালো পতাকা দেখানো ও তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় নির্বাচনী রাজনীতিতে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। তবে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যেরকম মুখোমুখি অবস্থানে আছে তাতে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা যাবে কেবল নির্বাচন শেষেই।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার কথা থাকলেও এখন বাস্তবে তা হচ্ছে না। কাগজে-কলমে নির্দলীয় বলা হলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন পুরোপুরি রাজনৈতিকভাবেই হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যেই প্রার্থী মনোনয়নের কথা বলছে। ভোটাররাও প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করে অর্থাৎ কোন প্রার্থীর পেছনে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন আছে, তা দেখেই ভোট দেবেন। তিন সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া আরও কিছু ছোট রাজনৈতিক দলের সমর্থিত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই। যারা মনে করেন এবং প্রচার করেন যে, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির 'রুগ্ন' রাজনীতির প্রতি বিরক্ত; মানুষ সুস্থ ধারায় রাজনীতি তথা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায়; তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল তাদের হতাশ করবে। কারণ তিন সিটিতেই হয় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন।

বড় দুই দলের সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকলেও জেতার সম্ভাবনা কোন দলের বেশি, এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া কঠিন। তবে যারা আওয়ামী লীগ সমর্থক তারা বলবেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবে আর যারা বিএনপি সমর্থক তারা বলবেন জিতবে বিএনপি। মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি, মানুষের মনোভাব ইত্যাদি বিবেচনা করেই ফলাফল সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা উচিত। কিন্তু বিএনপি সমর্থক দু-এক জন বুদ্ধিজীবী নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই পত্রিকায় কলাম লিখে রায় দিয়েছেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপিই জিতবে। কারচুপি করা ছাড়া নাকি আওয়ামী লীগের জেতার সম্ভাবনা নেই। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তিন সিটিতেই প্রার্থী মনোনয়ন থেকে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা- সবকিছুতেই এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপির যে 'এলোমেলো ও অগোছালো' অবস্থা তা আওয়ামী লীগের প্রতি বৈরী মনোভাবের পত্রিকাগুলোয়ও লেখা হয়েছে।

নির্বাচন এলেই প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগে যে সংকট দেখা যায়, এবার দলের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে তা হয়নি। এতে দলের মধ্যে কারও কারও চাপা অসন্তোষ থাকলেও প্রকাশ্য বিদ্রোহ নেই। এবার তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার কার্যক্রমও শেখ হাসিনা নিজেই তত্ত্বাবধান করছেন। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধিতা না থাকলেও নিষ্ক্রিয়তা আছে। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকারের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং এ চ্যালেঞ্জে জয়ী না হলে দল এবং সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে- এটা জানা সত্ত্বেও সরকার সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা গাছাড়া মনোভাব আছে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেও যেভাবে সব বিপদ-ঝামেলা থেকে সরকার ও দলকে রক্ষা বা উদ্ধার করেছেন, আসন্ন নির্বাচনেও তিনি তা করবেন। জেতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে প্রধানমন্ত্রী তিন সিটি নির্বাচনে আগ্রহ দেখাতেন না বলেই তাদের বিশ্বাস।

বিএনপি প্রার্থীরা কিছুটা দেরিতে মাঠে নেমেছেন এবং মামলা-হামলার কারণে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাও ভেঙে পড়ার মতো। তার পরও নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে দুর্বল ভাবার কারণ নেই। বিএনপির রয়েছে এক বিরাট অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠী। আওয়ামী লীগবিরোধী, ভারতবিরোধী, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষের সংখ্যাও আমাদের দেশে একেবারে কম নয়। এরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন, প্রার্থীর যোগ্যতা, গুণাগুণ বিবেচনা করবেন না। তা ছাড়া জামায়াত-শিবির তাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই সর্বশক্তি দিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়যুক্ত করতে সচেষ্ট থাকবে। নির্বাচনে 'অ্যান্টি ইনকামরেন্সি' বা সরকারের প্রতি ক্ষোভ-হতাশার ফ্যাক্টরটিও এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয় অর্জন করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। তখন হাওয়াটা এমন ছিল যে, অনেকে মনে করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি হয়তো জিতেও যেত। কিন্তু নির্বাচনে না যাওয়ার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি এখন অসুবিধায় আছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে জামায়াতের সমর্থন ও সহযোগিতায় সারা দেশে বিএনপি মানুষের জীবন ও সম্পদের যে ক্ষতি করেছে তাতে দলটির জনসমর্থন কমেছে, জনবিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। তারপর ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী টানা অবরোধ-হরতাল ডেকে পেট্রলবোমা-ককটেল নিক্ষেপ করে, নাশকতা চালিয়ে, মানুষ হত্যা করে সব মহল থেকে ব্যাপক নিন্দা-সমালোচনা কুড়িয়েছেন। বেগম জিয়ার এ হিংসার রাজনীতি সাধারণ মানুষ যদি পছন্দ না করে থাকে তাহলে সিটি নির্বাচনে তার প্রতিফলন অবশ্যই ঘটবে।

আমাদের দেশে গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট প্রায় সমান সমান। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা কোনো অবস্থাতেই বিএনপিকে ভোট দেন না। আবার বিএনপির সমর্থকরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন না। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ভর করে মূলত দলের অন্ধ সমর্থক নয় এমন ভাসমান বা ফ্লোটিং ভোটারদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তের ওপরই। ভাসমান ভোটাররা শেষ পর্যন্ত যেদিকে ঝুঁকবেন, জয় নিশ্চিত হবে তারই।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে গণভবনে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলে দলের মধ্যে প্রথমেই এ বার্তাটি দিয়েছেন যে, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ নিয়ে কোনো কথা চলবে না। কথা চলেওনি। আনিসুল হক একজন শিল্পপতি, তিনি ব্যবসায়ী নেতা। টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি পরিচিত। তার রয়েছে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। আওয়ামী লীগের কেউ না হলেও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠতা ও সুসম্পর্ক। নানা সামাজিক কাজকর্মেও তার অংশগ্রহণ আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব বিবেচনাতেই তিনি 'যোগ্য' ও 'উপযুক্ত' প্রার্থী। ঢাকা উত্তরে তাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়ে শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাসনা থাকলেও তারা বেশিদূর অগ্রসর হননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন 'বহিরাগত'কে নির্বাচনে জিতিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোমর বেঁধে মাঠে নামবেন কি না? শুরুতে এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন, কিছুটা জড়তা থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। সবাই দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ পালনে একাট্টা হয়েই নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। আনিসুল হক আওয়ামী লীগের 'তালিকাভুক্ত' নেতা না হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাড়তি কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। যারা সরাসরি দল করেন না, দলের সভা-সমাবেশে অংশ নিতে দ্বিধাবোধ করেন অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি রয়েছে যাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, কিংবা যারা চান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাক, তারা আনিসুল হকের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইতে দ্বিধা করছেন না।

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি পড়েছিল বড় সংকটে। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ছিলেন খালেদা জিয়ার পছন্দের প্রার্থী। কিন্তু মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় তৈরি হয় জটিলতা। তবে মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত তার পুত্র তাবিথ আউয়ালও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু মিন্টু এবং মিন্টুপুত্র তো আর এক জিনিস নয়। মিন্টু বিএনপির সমর্থনে নির্বাচনে লড়লে যেরকম হাওয়া তৈরি হতো মিন্টুপুত্র তাবিথের ক্ষেত্রে তা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাবিথের নাম এর আগে কয়জন শুনেছে? বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে নিয়েও বিএনপির সমস্যা আছে। তাকে বিএনপি সমর্থন দিতে পারে বলে প্রচার হয়েছিল। কিন্তু ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতসহ আরও কয়েকটি দলের বিরোধিতার কারণে মাহীকে সমর্থন জানানো সম্ভব হয়নি। প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য আবদুল আউয়াল মিন্টু শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। বিভাগীয় কমিশনার, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট- সব জায়গায় তিনি গেছেন আপিল আর্জি নিয়ে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তার পুত্র তাবিথ আউয়ালের প্রতিই বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির সমর্থন পেয়ে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন মাহী বি চৌধুরী দেখেছিলেন, তা ভেঙে গেছে। মাহী বি চৌধুরী তাবিথ আউয়ালের চেয়ে বেশি পরিচিত। আগে বিএনপি-দলীয় এমপিও ছিলেন। তার বাবা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছিল। সবকিছুর কিছু 'বেনিফিট' কি নির্বাচনে মাহী পাবেন না? 'জাতীয়তাবাদী' ঘরানায় দুজন প্রার্থী সমানতালে লড়ে গেলে তো আনিসুল হকেরই বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা।

ঢাকা দক্ষিণে শেখ হাসিনা প্রার্থী বেছেছেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে। এখানে হাজী মো. সেলিম প্রার্থী হতে চেয়ে জোর প্রচারণা শুরু করেছিলেন। হাজী সেলিম পুরান ঢাকার একজন জনপ্রিয় নেতা। তার একটি নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকও আছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি জয়লাভ করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা হয়েও তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য! অনেকটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিটি নির্বাচন থেকে বসিয়ে দিলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে হাজী সেলিমকে সেভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী নিয়েও বিএনপি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য মামলা। তিনটি মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি আত্দগোপনে আছেন। তার পক্ষে থেকে স্ত্রী আফরোজা আব্বাস নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। বিএনপির ঢাকা মহানগরীর রাজনীতিতে মির্জা আব্বাসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। দল মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দেওয়ায় খোকা কি তার 'বিজয়' কামনা করবেন? খোকার সমর্থন না পেলে যে মির্জা আব্বাসের খবর আছে, তা অনেক বিএনপি সমর্থক প্রকাশ্যেই বলছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। শেখ হাসিনার ইচ্ছা এবং আগ্রহেই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সব নেতাকে পেছনে ফেলে তুলনামূলক তরুণ এই নেতা প্রার্থী হতে পেরেছেন। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং প্রভাবশালী নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রার্থী হতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছেন। সদ্যবিদায়ী মেয়র এম মন্জুর আলমকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমান প্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় মন্জুর আলমের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর শিষ্য হিসেবে পরিচিত মন্জুর আলম আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের কতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরাগভাজন হয়েছেন বলেই শোনা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, মেয়র হিসেবে তার সাফল্যও খুব দৃশ্যমান নয়। চট্টগ্রামের বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। পাঁচ বছরে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রগতি করতে না পারায় মন্জুর আলম এখন ব্যাপকভাবে সমালোচিত। সরকারের প্রতি ক্ষোভ-অসন্তোষের কারণে বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার যে ঝোঁক আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় লক্ষ্য করা গেছে, আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে তা থাকবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। ওই সময়ের পর নানা ঘটনায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। একদিকে তারা বর্তমান সরকারকে 'অবৈধ' বলছে, অন্যদিকে এই সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাহলে সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি কেন? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেও বিএনপি বার বার ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ক্ষমতা বিএনপির আছে বলে এখন আর কেউ মনে করছে না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে কোনো লাভ হবে কি না, ভোটাররা নিশ্চয়ই তা ভাববেন। সরকারের সহযোগিতা না পেলে নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলো নির্বাচিত মেয়রদের পক্ষে সমাধান করা যে সম্ভব হয় না তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। পাঁচ সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নাগরিকদের কোনো লাভ হয়নি। বিএনপিও ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়েছে। আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগে ভোটাররা কি আগে-পিছের কিছুই ভাববেন না?

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ই-মেইল : [email protected]

 

সর্বশেষ খবর