মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা আমাদের উচিত তওবা ও দোয়া করা

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

ভূমিকম্প পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতির ওপর বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের গুনাহের কারণে। অতঃপর পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে গেছে সেসব জাতির চিহ্ন। তখনকার জাতিগুলোর অপরাধের কারণে আল্লাহতায়ালা এই আজাব নাজিল করেন। আজকের পৃথিবীতেও মানুষ অপরাধ করছে নির্দ্বিধায়। খেয়াল নেই আল্লাহর হুকুমের কথা। প্রিয় নবীর তরিকার কথা। শত শত অপরাধের মাঝেও মানুষ ভাবে না একবার মৃত্যুর কথা। কবরের কথা। আখিরাতের কথা। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে যে ভূমিকম্প হয়েছে তাতে যদিও বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবু এ থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। আল্লাহর কাছে তওবা করা দরকার। ক্ষমা চাওয়া দরকার। দোয়া করা দরকার। ভয় হয়, না জানি আল্লাহর এই নির্মম শাস্তি তার প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে নেমে আসে আমাদের ওপর, আমাদের গুনাহের কারণে। আল্লাহ তার প্রিয় নবী হজরত সালেহ (আ.)-এর উম্মত সামুদ জাতির ওপর আজাব নাজিল করেছিলেন ভূমিকম্প দিয়ে, যখন তারা অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করেছিল। এরশাদ হচ্ছে : অতঃপর তাদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উবুড় হয়ে পড়ে রইল। সুরা : আরাফ, আয়াত ৭৮। উল্লেখ্য, হজরত সালেহ (আ.) এসেছিলেন যে এলাকায় তা হলো বর্তমান উত্তর আরবের কোনো এক এলাকা। তাফসির গ্রন্থগুলোয় পাওয়া যায়, হজরত সালেহ (আ.)-এর উম্মতের ওপর আজাব এসেছে বিভিন্ন কারণে। সেসবের মধ্যে রয়েছে ১. মূর্তিপূজা করা। তারা এক আল্লাহয় বিশ্বাস করত না। তারা বিশ্বাস করত বহু মাবুদ। বহু দেবদেবী তারা বানিয়ে নিয়েছিল। ২. নবীর সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করা। হজরত সালেহ (আ.) যখন বহু বছর ধরে এক আল্লাহর দাওয়াত দিয়েছিলেন তখন তারা ইমান আনেনি। সবশেষে তারা বলেছিল, যদি এই পাহাড় থেকে ১০ মাসের গর্ভবতী কোনো উটনী এনে দিতে পার তাহলে আমরা ইমান আনব। তাদের এ ওয়াদার ভিত্তিতে হজরত সালেহ (আ.) দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহর হুকুমে পাহাড়ের ভিতর থেকে প্রস্তরখণ্ড বিদীর্ণ হয়ে বেরিয়ে এলো ১০ মাসের গর্ভবতী এক উটনী। কিন্তু তার পরও তারা সবাই ইমান আনেনি। বরং অল্প কিছু লোক ইমান এনেছে। ৩. তারা আল্লাহ-প্রদত্ত উটনীকে হত্যা করেছিল, যা তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। মোট কথা, মূর্তিপূজা, নবীর সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া উটনী হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের কারণে সামুদ জাতির ওপর আল্লাহর আজাব ভূমিকম্পরূপে নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনের আরেকটি আয়াতে হজরত শুয়াইব (আ.)-এর উম্মতের ওপর ভূমিকম্পের আজাব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত শুয়াইব (আ.) এসেছিলেন মাদইয়ান শহরে যা বর্তমান জর্ডানের পূর্ববর্তী সমুদ্র অঞ্চলের উপকূলঘেঁষে অবস্থিত। তার উম্মতরা যখন আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ওজনে ও পরিমাপে কম দেওয়াসহ নানাবিধ জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত হলো এবং তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেল তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব নেমে এলো। এরশাদ হচ্ছে : অতঃপর তাদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প। ফলে তারা উবুড় হয়ে পড়ে রইল নিজ নিজ ঘরে। যারা শুয়াইবের প্রতি মিথ্যা আরোপ করল তাদের অবস্থা এমন হলো যে, তারা যেন সেখানে কখনো বসবাসই করেনি। যারা শুয়াইবের প্রতি মিথ্যা আরোপ করল তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। সুরা : আরাফ, আয়াত ৯১-৯২।

লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী

 

 

সর্বশেষ খবর