সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছিল তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনা। পাঁচ মাস আগের এ সর্বনাশা দুর্ঘটনায় সাড়ে তিন লাখ লিটার জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদী, খাল এবং জলাভূমিতে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য তা দীর্ঘ মেয়াদে হুমকি সৃষ্টি করে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। সরকারও বিব্রত অবস্থায় পড়ে এ ঘটনায়। কারণ জাতিসংঘ সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর এই নয়নাভিরাম বনভূমির সুরক্ষায় এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করে। সে প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় তেলবাহী জাহাজডুবির পর সমালোচনার তীর সরকারের দিকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার বিপদও ঘনিয়ে আসে। যে প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলায় সক্রিয় হয়ে ওঠে বনবিভাগ। তারা স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক লাখ লিটার তেল অপসারণ করতে সক্ষম হয়। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ঘষিয়াখালী চ্যানেল চালু না হওয়া পর্যন্ত সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও তেলবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইতিমধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হানার মতো গত ৫ মে ৬৭০ মেট্রিক টন সারবাহী একটি জাহাজ ডুবে যায়। সারের রাসায়নিক উপাদান সুন্দরবন এলাকার গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যের জন্য নতুন করে হুমকি সৃষ্টি করে। অভিযোগ উঠেছে, বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তেলবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। তাদের এ অর্বাচীন আচরণ ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের যে সম্মান সুন্দরবন ভোগ করছে তা প্রত্যাহারের হুমকি সৃষ্টি করেছে। আমরা আশা করব, সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকার যেহেতু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেহেতু কাদের হঠকারিতায় এই বাদাবন এলাকায় তেলবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং এই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে।