বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
দর্শন

যে রহস্যের কথা কখনো বলা হয়নি

আবু মহি মুসা

যে রহস্যের কথা কখনো বলা হয়নি

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের উৎকর্ষ, জ্ঞানের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মতবাদের পরিবর্তন ঘটে।

যে কারণে দার্শনিক মতবাদেও পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক বৈজ্ঞানিক সূত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন আমরা এক সময় টেলিফোনে কথা বলতাম সুইসিং সিস্টেমে। টেলিফোনের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে নম্বর লাগিয়ে দিতে বলা হতো। সেখান থেকে এনালগ, ডিজিটাল, মোবাইল, আজ আমরা স্কাইপির মাধ্যমে যার সঙ্গে কথা বলছি তাকে দেখতে পাচ্ছি। এটাকেই আমরা লুফে নিচ্ছি। কারণ এটা দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, বোঝা যায় কিন্তু দার্শনিক মতবাদ দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, বোঝা যায় না। এই দুর্বোধ্যতার কারণে অনেক মনীষী অপমানিত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন, দেশ থেকে পালাতে হয়েছে, এমনকি জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। যখন তাদের মতবাদের মূল্যায়ন হয়েছে তখন তাদের কবরের অস্তিত্ব পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এখানে বলা হয়েছে, প্রাচীন কালের মনীষীদের মতবাদ যত যুক্তিহীন ভিত্তিহীন হোক, কোনো মতবাদই গুরুত্বহীন নয়। প্রত্যেক মতবাদই একটি সময়োপযোগী সত্যের প্রতীক। সময় অতিক্রান্ত হলে তার সত্যতা থাকে না। যেমন বাংলাদেশে এক সময় জেলা ছিল ২১টি। এটা সত্য। আজ এটাকে সত্যও বলা যাবে না, মিথ্যাও বলা যাবে, এটাই সত্যের প্রতীক। প্রাচীনকালের মনীষীদের মতবাদের সত্যতা যেখানে শেষ, আমরা সেখান থেকে শুরু করছি। কাজেই তাদের মতবাদের সঙ্গে আমার বা এ যুগের দার্শনিকদের মতবাদের পার্থক্য আকাশ পাতাল থাকাই স্বাভাবিক। যেমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি চ্যাপ্টার আছে। সেখানে রাষ্ট্রের উৎপত্তির কারণ হিসেবে যে মতবাদ রয়েছে তা হচ্ছে, ঐশ্বরিক মতবাদ, বিবর্তনবাদ, মাতৃতান্ত্রিক-পিতৃতান্ত্রিক চুক্তিবাদ এবং শক্তি প্রয়োগ। এসব মতবাদের কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টিকে কে কিভাবে নেবেন জানি না। যদি কেউ যুক্তি না মানেন, তবে এখানে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি বলতে এখানে দুটো রাষ্ট্রের কথাই আসবে। একটি আদি রাষ্ট্র, অন্যটি আধুনিক রাষ্ট্র। আধুনিক রাষ্ট্র বলতে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র ভেঙে নতুন একটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি। যেমন, পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকতে হবে, যেমন, বাংলাদেশ। এরপর জাতীয়তাবোধ, একটি ভাষাগত, অন্যটি ধর্মীয়। কেন্দ্র কর্তৃক শাসনের কারণে বৈষম্য, গণসচেতনতা, রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা গ্রহণের উচ্চাভিলাষ, গণজাগরণ, সর্ব শেষে শক্তি প্রয়োগ। আদি রাষ্ট্রের উৎপত্তি ক্ষেত্রে রয়েছে, আধ্যাত্দিক জ্ঞান, প্রেম, নির্ভরশীলতা। একদম যদি শুরু থেকে ধরা হয়, বলতে হবে সেঙ্ রাষ্ট্রের উৎপত্তির কারণ। বিবাহ প্রথা, দাম্পত্য, পরিবার, গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র সমাজ, ক্ষুদ্র সমাজ থেকে বৃহৎ সমাজ। এই বৃহৎ সমাজই একজনের নেতৃত্বে রাষ্ট্ররূপে আত্দপ্রকাশ করে। এটাই আদি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এসব কিন্তু নেই। দর্শনের যতগুলো বিষয় আছে, আমি যদি বলি, এর একটিও গ্রহণযোগ্য নয়।

অনেকেই বলেন, মানুষের পক্ষে মহাবিশ্বের সবকিছু জানা সম্ভব নয়। আমি তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নই। আমি বলেছি, জ্ঞানের এক বিন্দু অজানা অবস্থায় মহাবিশ্বের ধ্বংস হতে পারে না। বিশ্বপ্রকৃতি হচ্ছে জ্ঞানের ভাণ্ডার। বিশ্বপ্রকৃতির খাতার পাতায় সৃষ্টির আদি থেকে শুরু করে ধ্বংস পর্যন্ত সবকিছু লেখা আছে, এই লেখা হচ্ছে সাংকেতিক ভাষায়। এ ভাষাকে বুঝতে হলে পৃথক একটি দৃষ্টি থাকতে হবে। যার এমন দৃষ্টি আছে, তিনিই কেবল এ ভাষা বুঝতে পারবেন। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আপেলের মতো অনেক ফল গাছ থেকে পড়তে দেখেছেন। কিন্তু একমাত্র নিউটন ব্যতীত আর কেউ তো মাধ্যাকর্ষণের উৎস আবিষ্কার করতে পারেননি। সবাই আকাশে পাখি উড়তে দেখেছেন, কিন্তু অন্য কেউ বিমান আবিষ্কার করতে পারেননি। দুজন বিসিএস অফিসারের আচরণ দেখেছি, তাদের বিপরীতধর্মী আচরণ জ্ঞান এবং মেধার পার্থক্যের বিষয়টি সু্স্পষ্ট করে দিয়েছে আমার কাছে। যেমন, আকাশ অসীম না সসীম, এর প্রথম ধারণা পেয়েছি কেঁচোর মধ্যে। থিওরি অব ব্যালেন্স এটাকে সমর্থন দিয়েছে। এরপর বস্তুগত প্রমাণ, দার্শনিক যুক্তি, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি।

এখন যে বিষয়টি নিয়ে আমি গবেষণা করছি, দেশ এবং জাতির সমস্যা নিয়ে। দেশের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি এতটুকু বলতে পারি, আন্তরিক হলে, সমন্বিত উদ্যোগ নিলে, এ দেশটাকে সোনার বাংলায় পরিণত করা সম্ভব। তার পূর্বশর্ত একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন। তবেই সম্ভব।

লেখক : দার্শনিক।

ই-মেইল :  [email protected]

 

সর্বশেষ খবর