শুক্রবার, ২৯ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
স্মরণ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

শায়রুল কবির খান

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

৩০ মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ঐতিহাসিকভাবেই তাকে সামনে রেখে তার দেখানো পথে নতুন উদ্যমে শুরু করতে হবে আগামীর ভাবনা। কারণ তিনি আমাদের অগ্রগতির উৎস হয়ে রয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্য ও প্রগতির মধ্যে এক ধরনের ঐকতানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১. রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে কিছুসংখ্যক কর্মীর মধ্যে যে ভীতি এবং ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছিল তা বিএনপির ঐতিহ্য ও আদর্শের বিপরীতে তাড়িত করেছিল। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্বের ওপর দুটি বড় দায়িত্ব। ১. দলকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করে গড়ে তোলা ২. দেশের জনগণকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করা। যার মধ্য দিয়ে এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদি অব্যাহত থাকবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে তাদের সহযোগিতা করা, যেন তারা তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে। সুষম বণ্টনের মধ্য দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করা। ২. গত কয়েক বছরে বিএনপির ওপর দিয়ে একাধিক ঝড় বয়ে গেছে। যে ঝড়ে গাছটি উপড়ে পড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু পড়েনি, কারণ 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ' বিএনপির আদর্শিক জায়গাটি মজবুত। ২০০৭-এর এক-এগারোতে মইন-ফখরুদ্দীন বিএনপি এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে প্রচণ্ড আঘাতের মধ্য দিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিল সেই পরিকল্পনা এখনো অব্যাহত আছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামীর কাণ্ডারী তারেক রহমান, জননেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারা দেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার হয়রানিমূলক মামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ক্রমাগত নিপীড়নের মধ্যে আমরা আমাদের আদর্শের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিখ্যাত উক্তি 'জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস' মনে করে শক্তির সঙ্গে জ্ঞানের বৃদ্ধি করি এবং যত কম শক্তি প্রয়োগ করব আমাদের শক্তি তত বৃদ্ধি পাবে। ৩. দমনমূলক ব্যবস্থা কখনোই সৎ চিন্তাধারাকে তাড়িয়ে দিতে সফল হয় না। ক্ষমতায় থেকে নির্মমভাবে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করবেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে ক্ষমতা বজায় রাখবেন। সহিষ্ণুতা ও বোঝাপড়ার চেতনা বাদ দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারগুলোকে অসম্মান করবেন। আইনের শাসনকে ভূলুণ্ঠিত করে ভোটের অধিকার হরণ করে একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, পাল্টাতে হবে গতানুগতিক চিন্তাধারা। ৪. 'সুশাসনের জন্য পরিবর্তন' এই শতকের চ্যালেঞ্জ। সব মানুষকে, নারী-পুরুষ সবাইকে পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকশিত করার সুযোগ দিয়ে, পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের অভিন্ন সমৃদ্ধি আসতে পারে। সামাজিক ব্যবস্থায় পুরুষের সক্ষমতা অর্জনের জন্য পুরুষদের মতো নারীরাও যারা তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালনে জীবনযাত্রা বেছে নিতে পারে, যেটা তাদের পছন্দের বিষয়। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমাদের পছন্দগুলোর ওপর রাজনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত সুশাসন, যা আমাদের সমাজ, পরিবার, ঐতিহ্য ও ধর্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়। ৫. দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলো তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রেখেই অর্থনীতির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করছে। একইভাবে প্রযোজ্য কুয়ালালামপুর থেকে দুবাই পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের বিস্ময়কর অগ্রগতির ক্ষেত্রে। যে কোনো উন্নয়ন কৌশল যা প্রকৃতি থেকে উঠে আসে তার ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না এবং তরুণ-তরুণীরা যখন বেকার থাকে তখনো এটাকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। তেলের কারণে উপসাগরীয় দেশগুলো বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ এখন আরও ব্যাপক উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করছে। কিন্তু সবাইকে এটা স্বীকার করতে হবে সুশাসনেই দিয়েছে শিক্ষা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করতে। আমরা পিছিয়ে আছি সুশাসনের অভাবে। তাই আমাদের এই শতকের স্লোগান 'পরিবর্তনের জন্য সুশাসন-সুশাসনের জন্য পরিবর্তন' সুশাসন ফিরে এলে তবেই দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, দুবাইয়ের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুবিচার ও সমৃদ্ধির নীতি অনুসরণ করে।

 

সর্বশেষ খবর