বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঘুষ দুর্নীতির গিলেটিন

জনগণকে রক্ষার ব্যবস্থা নিন

জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পান। তাদের সন্তানদের লেখাপড়াসহ সব খরচও নির্বাহ হয় সে বেতন থেকে। কিন্তু দেশের এমন কোনো সরকারি অফিস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনে যথাযথভাবেই সরকারি দফতরগুলোর হাল হকিকত তুলে ধরে বলা হয়েছে, ঘুষ ছাড়া সরকারি অফিসে কোনো কাজ হয় না। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে লাজলজ্জা থাকলেও অধস্তন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত সেবাপ্রার্থীদের অভিন্ন সুরেই বলেন- 'টাকা দাও কাজ নাও'। কাগজপত্র যতই সঠিক থাকুক, দাবি যতই ন্যায্য হোক, টাকা ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এমনকি আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেও টাকার দাবি পূরণ করতে হচ্ছে। বৈধ প্রশাসনিক সহায়তা পেতে, পুলিশি সাহায্য নিতে এমনকি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে হলেও চাহিদামাফিক টাকা দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নিতেও টাকা লাগছে। চাহিদামাফিক টাকার বিনিময়ে 'দয়া' বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেপরোয়া পরিস্থিতি চলছে পুলিশ বিভাগে, পাসপোর্ট অফিস, গ্যাস-বিদ্যুৎ খাত, কাস্টমস, রাজউক, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, এলজিইডি, বিআরটিএ, শিক্ষা, ভূমি, স্বাস্থ্য সেক্টরের সব বিভাগে। বলা হয়, ফুয়েল না দিলে ফাইল নড়ে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ঘুষ না দিলে মন্ত্রীর চাকরির সুপারিশও কার্যকর হয় না। ঘুষবাণিজ্য রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা পাওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছে। দুর্নীতিরোধ ও অপরাধ দমনে নিয়োজিত যারা তাদের মধ্যেই ঘুষ উৎকোচের নোংরা ভূত বেশি ক্রিয়াশীল। নিজ দফতরের অধস্তনরা রেহাই পান না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উৎকোচ চাহিদা মেটাতে না পারলে। নৈতিক ও আইনি দিক থেকে ঘুষ চূড়ান্তভাবে অনৈতিক এবং অবৈধ হলেও সরকারি অফিসগুলোতে তা এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া স্বর্গ হাতে পাওয়ার সমান। শোষণ ও নিপীড়নের এই গিলেটিন থেকে জনগণকে বাঁচাতে সরকার সক্রিয় হবে দেশের মানুষ এমনটিই দেখতে চায়।

 

সর্বশেষ খবর