শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

সৎ কর্মশীল বান্দাদের পুরস্কার জান্নাত

হাফেজ কারী মাওলানা মুফতী ওলিউল্লাহ পাটওয়ারী

সৎ কর্মশীল বান্দাদের পুরস্কার জান্নাত

জান্নাত আরবি শব্দ, অর্থ বাগান। জান্নাত শব্দের মৌলিক অর্থ হচ্ছে গোপন বা আবৃত থাকা। বাগান যেহেতু গাছপালা দ্বারা আবৃত থাকে তাই বাগানকে জান্নাত বলা হয়। আর পরকালের বেহেস্ত অসংখ্য নেয়ামত দ্বারা আবৃত তাই তাকে জান্নাত নামে নামকরণ করা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় জান্নাত বলা হয় সেই স্থান বা ঘরকে যা আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের জন্য রেখেছেন, যা দিগন্ত বিস্তৃত এর মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত ও অসংখ্য সব ধরনের নেয়ামত, চিরস্থায়ী অনাবিল সুখ-শান্তি ও আনন্দ, যার তলদেশ দিয়ে বয়ে গেছে বিভিন্ন ঝরনাধারা। জান্নাত চিরশান্তির স্থান, মানুষ ও জিনদের চরম অন্তহীন চাওয়া-পাওয়া পরম সুখ-শান্তি ও ভোগ-বিলাসের অকল্পনীয় পূর্ণতা লাভের একমাত্র স্থান, এর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়, তাই হজরত রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি আমার সৎ কর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোখ দেখেনি, যা কোনো কান শোনেনি, এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারবে না (বুখারি)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জান্নাতের নেয়ামত উপলব্ধি করার জন্য জান্নাতের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় বিভিন্ন শব্দ বা নাম ব্যবহার করেছেন যেমন (১) জান্নাতে আদন : 'আদন' অর্থ কোনো স্থানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, বসবাস করা। জান্নাত যেহেতু চিরস্থায়ী আবাস, কখনো শেষ হবে না, তাই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহপাক বলেন, জান্নাতু আদনে তারা প্রবেশ করবেন, যার তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। তাদের জন্য সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই পাবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদের পুরস্কার দিয়ে থাকেন। (সূরা নাহল-৩১ (২) জান্নাতে খুলুদ 'খুলুদ' শব্দের অর্থ স্থায়ী হওয়া। জান্নাতিরা সেখানে চিরস্থায়ী হবে, যেখান থেকে কখনো বের হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা সেখানে শান্তির সঙ্গে প্রবেশ কর এটাই (খুলুদ) (সূরা ক্বফ-৩৪)। (৩) জান্নাতে নাঈম 'নাঈম' অর্থ সুখ স্বাচ্ছন্দ্য করা, অবাধ স্বাধীনতা ইত্যাদি। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, তাদের রবের কাছে রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত (সূরা আল কলম-৩৪) (৪) জান্নাতে মাওয়া 'মাওয়া' শব্দের অর্থ ঠিকানা বা প্রকৃত আশ্রয়স্থল। নেক্কার ও শহীদদের রূহগুলো এখানে এসে আশ্রয় নেয়। এ জন্য এর নামকরণ করা হয় জান্নাতুল মাওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা ইমান আনবে ও নেক আমল করবে তাদের জন্য তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া (সূরা আস্্ সাজদাহ-১৯)। (৫) দারুস সালাম : এর অর্থ হচ্ছে শান্তির ঘর, যেহেতু জান্নাতে থাকবে শান্তি ও নিরাপত্তা। এবং তারা পরস্পর সালাম বিনিময় করবে। আল্লাহ ও ফেরেস্তারা সালাম জানাবে, তাই একে দারুস সালাম বা নিরাপত্তা ও শান্তির ঘর বলা হয়। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ (দারুস সালাম) বা শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করেন সরল পথের দিকে (সূরা ইউনূস-২৫)। (৬) দারুল মাকাম : অর্থ- স্থায়ী আবাসের বাড়ি। এখান থেকে কাউকে কখনো উচ্ছেদ করা হবে না। পবিত্র কোরআনে সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে- 'যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের (দারুল মাকাম) স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন। যেখানে কোনো কষ্ট আমাদের স্পর্শ করবে না এবং কোনো ক্লান্তিও আমাদের স্পর্শ করে না (সূরা আল ফাতির-৩৫)। (৭) জান্নাতুল ফিরদাউস যার অর্থ- ফিরদাউস এমন বাগানকে বলা হয় যাতে সব ধরনের গাছপালা এবং বিভিন্ন বাগানে যা থাকে, তা সবই এখানে পাওয়া যায়। জান্নাতগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত হচ্ছে জান্নাতুল ফিরদাউস। এ জান্নাতের ওপরে আল্লাহর আরশ অবস্থিত। আল্লাহ নিজ হাতে এটি তৈরি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় যারা ইমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের মেহমানদারীর জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস (সূরা আল কাহাফ-১০৭)।

লেখক : দক্ষিণ পীরেরবাগ অলি মার্কেট বায়তুন নূর জামে মসজিদ, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর