গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে জলজট আর যানজটের নগরীতে। যানজট আর জলজটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে পুরো রাজধানী। রোজাদারদের জন্য জলজট-যানজট বাড়তি ভোগান্তি হয়ে দেখা দিচ্ছে। গত তিন দিন হাজার হাজার রোজাদারের বাসায় ইফতার করা সম্ভব হয়নি ভয়াবহ যানজটের কারণে। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে রাজধানীতে বর্ষা হলেই জলাবদ্ধতা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানীর প্রায় সব রাস্তা পিচের তৈরি হওয়ায় কয়েক ঘণ্টা জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকলেই তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কংক্রিটের টেকসই রাস্তা নির্মাণে সরকারি পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা চললেও তার বাস্তবায়নের অভাবে নগরবাসীর ভোগান্তিই শুধু বাড়ছে। জলাবদ্ধতা কমাতে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ একের পর এক পরিকল্পনা নিলেও তাতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। গতকাল টানা বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে, জলাবদ্ধতার কারণে ভয়াবহ যানজটেরও সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে দেখা দেয় ভয়াবহ অবস্থা। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো নগরায়ণের সবক্ষেত্রে যে অব্যবস্থাপনার ছাপ রয়েছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থা রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হতো বেশকিছু প্রাকৃতিক খাল। এসব খালের সিংহভাগই বেদখল এবং ভরাট হয়ে গেছে। অদ্ভুত এ দেশে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাল এমনকি নদীও বেদখল হয়ে যায়। যারা জনগণের ট্যাক্সে টাকায় পরিচালিত হন, সরকারের ভূমি দফতরের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তা আত্দসাতের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে লুটেরার দল। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগর জীবনে। আমাদের মতে, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দুই মেয়র জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। বেদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করা দরকার।